ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গলার বড়শি খুলে নিয়েছেন যতক্ষণ আছি কথা বলতে চেষ্টা করবো: লতিফ সিদ্দিকী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৯ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৪
গলার বড়শি খুলে নিয়েছেন যতক্ষণ আছি কথা বলতে চেষ্টা করবো: লতিফ সিদ্দিকী

ঢাকা: স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে এই সংসদের সময়ের অভাব হয়। যাদের গলায় বড়শি লাগানো আছে তারা কথা বলবেন না।

আমিও ৬০ বছর বলিনি। আপনারাই বড়শিটা খুলে নিয়েছেন। তাই আমি যতক্ষণ আছি কথা বলতে চেষ্টা করবো ৷

রোববার (৫ মে) জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) সংশোধিত বিল-২০২৪ উত্থাপনের বিরোধিতা করে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে সংসদে বিল উপস্থাপন করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

বিলটি উত্থাপনে বিরোধিতা করেন বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক প্রথমে বক্তব্য দেন৷ এরপর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বক্তব্যের শুরুতেই চুন্নুর বক্তব্যেকে সমর্থন করেন৷

লতিফ সিদ্দিকী বলেন, স্থানীয় সরকার ধারণা নসাৎ করাই শুধু নয়। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাটি কোনোদিনই আমরা কার্যকর করিনি। করতে দেইনি। আমরা যতই গণতন্ত্রের কথা বলি, চেতনা ও চৈতন্যে জাতিগতভাবে আমরা এখনো আমরা গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন হতে পারিনি। যেখানেই ব্যর্থতা সেখানেই প্রশাসক নিয়োগের একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রশাসকের বিষয়টি গণতন্ত্র বিরোধী চেতনা। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বঙ্গবন্ধুকে শুধু জিহবা থেকে উচ্চারণ করি। অন্তরে অন্য কিছু বিবেচনা করি। আইন প্রত্যাহার করে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করবেন।

তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদকে আমরা গলাটিপে মেরে ফেলেছি। ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হলো জেলা প্রশাসক। এ ধরনের চিন্তা আমরা কেন করছি? আমরা কী পিছু হাঁটছি? আমাদের বোধ হয় ভুতের পা হয়ে গেছে। আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমাদের চিন্তাটা কী? কোথায় যেন আমাদের একটা সমস্যা। সব সময় আমরা পরের হাতে লবণ খাই।

লতিফ সিদ্দিকী বলেন, এই আইন কোনো সংসদ সদস্যরা রচনা করে না। আমলাদের মস্তিষ্ক থেকে যে আইন প্রণয়ন হয় তা কখনো জনস্বার্থে আসতে পারে না।


লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের এক পর্যায় সংসদে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু তাকে থাকিয়ে দিয়ে বিষয়ের ওপর (বিলের) আলোচনা করতে বলেন।  

এ সময় লতিফ সিদ্দকী বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে এই সংসদের সময়ের অভাব হয়। কিন্তু হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপিতে অর্থের অপচয় হয় না। কিন্তু কোনো সদস্য একটু সময় বেশি চাইলেই অভাব হয়। এই সংসদে জাতির চেতনার কথা, জাতির স্বার্থের কথা, জাতির ভবিষ্যতের কথা আলোচনা হবে। সেখানে যে বলতে পারে তাকে বলতে দিন। যাদের গলায় বড়শি লাগানো আছে তারা কথা বলবে না। আমিও বলিনি। ৬০ বছর আমি বলিনি। আজকে আমার গলার থেকে আপনারাই বড়শিটা খুলে নিয়েছেন। তাই আমি যতক্ষণ আছি, আপনি যতই বাধা দেন, আমি কথা বলতে চেষ্টা করবো। আবার আপনার আদেশ.. আপনি যখন বন্ধ করে দেবেন। লালবাতি। আমি বসে পড়বো। ‍কিন্তু বিনীতভাবে বলবো আমাকে বলতে দিন। সময় নষ্ট হচ্ছে না। জাতির কত সময় নষ্ট হয়েছে। সময়ের কথা বলছেন। আমার জীবনের ১৪ বছর এ জাতির জন্য কারাগারে কেটেছে। আমার জীবন এবং যৌবন। সুন্দরী সহধর্মিনীকে সাথে নিয়ে ৭ বছর প্রবাসে কাটিয়েছি।  

স্পিকার আপনার আজকে সময়ের সংকট দেখা দিয়েছে। জাতি এখন সংকটে রয়েছে। এখানে বিদ্যুতের কথা বলা হয়েছে। আমি কাউকে বলবো না আপনি আমার এলাকায় আসুন। মন্ত্রী যেকোনো এলাকায় যাবেন সেখানে বিদ্যুৎ যাবে না এটা ভালো করেই বুঝেন।

তিনি বলেন, আমার বক্তৃতায় যদি ফিরে আসতে দেন না হলে বসে পড়ি। তিনি স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্পিকার বসে পড়বো? এ সময় স্পিকার কোন কথা না বললে লতিফ সিদ্দিকী আবারও বলে উঠেন, আপনি নীরব হয়ে গেলেন আমিও নীরব হয়ে যাই। আমি কিন্তু ওই চেয়ারটিকে (স্পিকার) সম্মান করি। .. এ সময় ডেপুটি স্পিকার তাকে বসতে বললে তিনি আলহামদুল্লিাহ বলে বসে পড়েন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৪
এসকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।