ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

লোকবল সংকট, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
লোকবল সংকট, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে

নীলফামারী: প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই, লোকবল সংকটের কারণে নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি এখন নিজেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলে সাতটি উপজেলার প্রায় তিন লাখ রোগী হাসপাতালটির ওপর নির্ভরশীল।

জেলা পর্যায়ের হাসপাতালটি জেলা কোড হঠাৎ পরিবর্তিত হওয়ায় হাসপাতালটির মর্যাদা বর্তমানে জেলা না উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ফলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বরাদ্দ পেতেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে গুরুত্বপূর্ণ শহর সৈয়দপুরে জেলা মর্যাদার ৫০ শয্যা এ হাসপাতালটি গড়ে উঠে। ওই সময় মহকুমা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা ছিলো মাত্র ১৭টি। বিগত এরশাদ সরকারের আমলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের আওতায় মহকুমাগুলো জেলায় উন্নীত হয়। ওই সময় ১৭ শয্যার হাসপাতালগুলো ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। পরে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এলে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোকে ১০০ শয্যার সুবিধা প্রদান করা হয়। সে অনুযায়ী জনবল কাঠামো ও অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়। এরপর জেলা পর্যায়ের অনেক হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়েছে। অথচ উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হলেও ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো দিয়ে চলছে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালটি।

একটি সূত্র জানায়, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের বহির্বিভাগে (আউটডোর) প্রতিদিন দেড় হাজারের বেশি রোগী সেবা নিতে আসেন। এছাড়াও হাসপাতালে ১০০ শয্যা থাকলেও ২ শতাধিক রোগীকে ভর্তি নিতে বাধ্য হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত রোগীকে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন আছে। সেটি মাঝেমধ্যে বিকল হয়। নেই পরিচালনার জন্য রেডিওলোজিস্ট। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন আছে, নেই সনোলজিষ্ট। দুটি জরাজীর্ণ অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে যা প্রায়শ বিকল থাকে। ফলে লোকজনকে বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়।

হাসপাতালটি শহরের কুন্দল এলাকায় অবস্থিত। ওই এলাকার বাসিন্দা ও সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরিবহন মালিক মোজাম্মেল হক জানান, হাসপাতালটি এখন নানা সমস্যায় নিজেই অসুস্থ্য। ৬২ বছর আগের স্টাফ কোয়ার্টারগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। গত বর্ষায় হাপাতাল চত্বর পানিতে ডুবে যায়। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম বিপাকে পড়েন। হাসপাতালের নতুন পাঁচতলা ভবনে উঠারে জন্য নেই কোনো লিফট। র‍্যাম্প সিঁড়ি থাকলেও মাঝেমধ্যে মোটরসাইকেলসহ রোগীর আত্বীয়-স্বজন ওই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেন।

সরজমিনে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে রোগীদের দীর্ঘ সারি। অনেকের হাতে স্লিপ। অল্প সংখ্যক চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তার উপর দরকারি ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা। দিনাজপুরের খানসামা থেকে আসা রোগী আসমা খাতুন (৪৪) জানান, তিনি পায়ে আঘাত পেয়েছেন। তার এক্সরে করা খুবই প্রয়োজন। ১৫দিন ধরে ঘোরাঘুরি করছেন কিন্তু এক্সরে করতে পারছেন না। কারণ নাকি এক্সরে মেশিনের ইউপিএস'র সমস্যা হয়েছে। সৈয়দপুরের সাহেবপাড়ার জুলহাস উদ্দিন (৫৬) জানান, হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসে দেখেন এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তাই তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছেন।

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে উপসচিব পদমর্যাদার একজন তত্ত্ববধায়কের অধীন। এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন পাশের দিনাজপুরের চিরিবন্দর, পার্বতীপুর, খানসামা উপজেলা ও রংপুরের তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, নীলফামারী জেলার সদর ও সৈয়দপুর ও তার আশেপাশের ৩ লাখ রোগী। হাসপাতালটি ১১ জন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের পদ থাকলেও সবকটি পদ বর্তমানে শুন্য রয়েছে। ১০ জন  জুনিয়র বিশেষজ্ঞ পদে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৪ জন। ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণির ৪৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২৩ জন। নেই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ। বিশেষায়িত এসব চিকৎসাসেবা না থাকায় রোগীরা বিড়ম্বনা পোহাচ্ছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোয়িশন (বিএমএ) সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা শাখার সভাপতি ডা. মাহবুবুল হক দুলাল বলেন, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকাটা দুঃখজনক। অবিলম্বে শূন্যপদে চিকিৎসক ও কর্মচারী নিয়োগের দাবি করেন তিনি।

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আশরাফ হোসেন বলেন, লোকবল সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া এক্সরে মেশিন মেরামতের জন্যও সরবরাহকারীকে বলা হয়েছে। হাসপাতালের কোড পরিবর্তন বা সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম বলেন, হাসপাতালের সমস্যা নিয়ে জাতীয় সংসদে কথা বলেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ  করে হাসপাতালের লোকবল সংকট ও সমস্যার সমাধান করা হবে। সেই সঙ্গে এই জনপদের হাসপাতালটি জনগণের চাহিদার স্বার্থে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করণের জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।