ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভুয়া পরিপত্র দেখিয়ে গণস্বাস্থ্যের সোয়া কোটি টাকার গাছ ২৩ লাখে বিক্রি

অতিথি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৪
ভুয়া পরিপত্র দেখিয়ে গণস্বাস্থ্যের সোয়া কোটি টাকার গাছ ২৩ লাখে বিক্রি গ্রেপ্তার সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা রাজীব মুন্সী

সাভার (ঢাকা): ভুয়া পরিপত্র দেখিয়ে সোয়া কোটি টাকার ৫ হাজার গাছ বিক্রির অভিযোগে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন -  নালিতাবাড়ি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাতকুচি গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়া ও সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা রাজীব মুন্সী।

বুধবার (১৫ মে) দুপুরে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসিব হাসান।  

গত ২৬ এপ্রিল মামলার আসামি বাতকুচি গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার তথ্য মতে গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) রাতে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকার নিজ বাসা থেকে রাজীব মুন্সীকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

রাজীব মুন্সী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার লক্ষীপুরা গ্রামের মৃত লালু মুন্সীর ছেলে। তিনি ২০১১ সালে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। এছাড়া নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়া শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার বাতকুচি এলাকার মৃত বাহাদুর আলীর ছেলে।  

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১০ জানুয়ারি সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা রাজীব মুন্সী নালিতাবাড়ি থানার বাতকুচি গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে যান। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়াকে গাছ বিক্রির একটি পরিপত্র দেখান । পরে সেখানকার ১২ একর পাহাড়ি জমিতে ১৮ বছর আগে রোপণ করা ৫ হাজার আকাশি প্রজাতির গাছ বিক্রি করে দেন। ঘটনার তিন মাস পরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপকেন্দ্র পরিদর্শন করতে গিয়ে জানতে পারেন সেখানকার ৫ হাজার গাছ বিক্রি করা হয়েছে। তবে গাছ বিক্রির ব্যাপারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছুই জানতেন না। এঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে গত ২৬ এপ্রিল নিরাপত্তা কর্মী লাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার জবানবন্দি অনুযায়ী গতকাল সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়ার জবানবন্দি অনুযায়ী, উপকেন্দ্রের ১২ একর জমির ৫ হাজার গাছ পাহারার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। প্রায় তিন মাস আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে শাকিল নামের এক ব্যক্তিসহ দুইজন বাগানে আসেন। পরে গাছ বিক্রির একটি কাগজ দেখান তারা। এর কিছুদিন পর সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা রাজীব মুন্সী ও শাকিল বাগানে এসে গাছ বিক্রি করেন। বিষয়টি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যানেজারকে জানাতে চাইলে রাজীব মুন্সী নিজেকে বড় স্যার পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করতে বাধা দেন। পরে ২৩ লাখ টাকায় গাছগুলো বিক্রি করেন তিনি। সহযোগিতা করায় তাকে এক লাখ টাকা দেন রাজীব মুন্সী।  

গাছ চুরির বিষয়ে শেরপুর জেলার ভাতশালা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক রেহেনা পারভীন বাংলানিউজকে  বলেন,  বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রায় তিন মাস উপকেন্দ্র পরিদর্শন করা হয়নি। আমরা নিরাপত্তাকর্মীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছিলাম। কিন্তু একবারও তিনি গাছ বিক্রির খবর দেননি। আমরা উপকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে গাছ না দেখতে পেয়ে নিরাপত্তা কর্মীকে জেরা করি। তখন তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা তাকে পরিপত্র দেখিয়ে গাছ কেটে নিয়ে গেছেন। আমরা সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা জানান সেখান থেকে কোনো ধরনের পরিপত্র দেওয়া হয়নি। তখন আমরা থানায় অভিযোগ করি।

নালিতাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) হাসীব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করা হয়। পরে এঘটনায় মামলা হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দি যাচাইয়ের পর রাজীব মুন্সী নামের একজনের সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়া যায়। গতকাল তাকেও সাভারের নিরিবিলি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

চক্রটির সঙ্গে জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং এ ঘটনায় বিক্রিত গাছ ও টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই উপ-পরিদর্শক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।