ঢাকা: গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশনকে সাড়ে নয় কোটি টাকা ঋণ দেওয়া, ঋণ মওকুফ ও কোটি কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এ সম্পর্কিত দালিলিক তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (২৬ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ অনুসন্ধানে আবেদনটি করেন প্রতিষ্ঠানটির ডিএমডি প্রদীপ কুমার সাহা।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকে অনেক দুর্নীতি মধ্যে আমরা একটি বিশেষ অভিযোগ নিয়ে এসেছি। প্যাকেজেস করপোরেশন লিমিটেড ড. ইউনূসের নিজের প্রতিষ্ঠান। এখানে সাড়ে নয় কোটি টাকা লোন দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি ও তার বাবা এবং পরিবারের সদস্যরা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, যে সময় এ অভিযোগ হয়েছে তখন আমরা ফিল্ডে ছিলাম, আমরা ন্যায়বিচার চাই।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রায়শঃ বলে থাকেন তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কখনও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুবিধা গ্রহণ করেননি। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে নিজ পারিবারিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে অবস্থিত প্যাকেজেস করপোরেশন লিমিটেডকে দাতা সংস্থার শর্ত লঙ্ঘনপূর্বক গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় আনা এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করার বিষয়ে আপত্তি উত্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক তার বাবা দুলা মিয়া, তিনি নিজে এবং তার অপর দুই ভাই আব্দুস সালাম ও মুহাম্মদ ইব্রাহীম। এছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক গঠিত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বনামধন্য নিরীক্ষা ফার্ম কর্তৃক ১৯৮৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪০ বছরের কম্প্রিহেনসিভ নিরীক্ষা রিপোর্টে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নিজ ও পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশন লিমিটেডকে বেআইনিভাবে ঋণ দেওয়া, ঋণ মওকুফ ও কোটি কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া সম্পর্কিত ব্যাপক দুর্নীতির দালিলিক তথ্য (অরিজিনাল ভাউচার, অ্যাডভাইস, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক ঋণ ও বিলের অনুমোদন পত্র ইত্যাদি) পাওয়া গেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালীন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে আইন ভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্বের চূড়ান্ত অবমাননা করে ১৯৯০ সাল থেকে নিজের পারিবারিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশনকে বহুবিধ অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন।
গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ-১৯৮৩ অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ সুবিধা শুধুমাত্র ভূমিহীন দরিদ্র ঋণগ্রহীতাদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও তিনি আইন ভঙ্গ করে তার পরিবারিক রুগ্ন ও লোকসানী প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশনকে বিপুল অঙ্কের ঋণ দিয়েছেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি সাধন করে নিজ প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অনাদায়ী টাকা ব্যাংক কর্তৃক সুকৌশলে মওকুফ করিয়ে নিয়েছেন।
তিনি গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ-১৯৮৩ লঙ্ঘন করে এবং পরিচালনা পর্ষদের কাছে গোপন রেখে নিজেই নিজের মালিকানাধীন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশনের সঙ্গে ব্যাংকের স্বার্থ পরিপন্থি একটি তত্ত্বাবধায়ক (ম্যানেজিং এজেন্ট) চুক্তি করেন। পরিচালনা পর্ষদের কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রেষণে নিয়োগ দেন এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের অফিস বিনা ভাড়ায় ব্যবহার করেন।
পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ব্যতিরেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই দর নির্ধারণী কমিটি গঠন পূর্বক নিজের প্রণীত ও স্বাক্ষরিত গ্রামীণ ব্যাংক ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিজের মালিকানাধীন পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে কোনো প্রকার প্রতিযোগিতামূলক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ছাড়াই উচ্চদরে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকার প্রিন্টিং সামগ্রী ছাপানোর কার্যাদেশ দিয়ে নিজে ও পরিবারিকভাবে বিপুল অঙ্কের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
উল্লিখিত অনিয়মের তথ্য প্রমাণাদি প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে আইনি পরামর্শকদের মতামত ও পরিচালনা পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক নিজের মালিকানাধীন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশনকে বহুবিধ অবৈধ সুবিধা দেওয়া সম্পর্কিত অনিয়মের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৪
এসএমএকে/আরআইএস