ঢাকা: আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে পশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি বন্ধে গাড়ির সামনে গন্তব্যস্থান বা হাটের নাম লিখে রাখার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পাশাপাশি পশুবাহী গাড়িগুলোকে রাস্তার বাম পাশের লেন ব্যবহার করতে বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঈদুল আজহার প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঈদুল আজহা সম্ভবত ১৭ জুন হতে যাচ্ছে। ঈদ যেন আনন্দঘন পরিবেশে হয়, সবাই যেন অংশ নিতে পারে, এ লক্ষ্যে আজকের এই সভা। সভায় সর্বসম্মিতক্রমে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, পবিত্র ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে এবং শহর এলাকায় যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। যেখানে মেট্রোপলিটন পুলিশ সেখানে তারা সমন্বয় করে কাজ করবেন। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানজট নিরসনে আমরা গতবারও ড্রোন ব্যবহার করেছিলাম। এবারও যানজট নিরসনে ড্রোন ব্যবহার করব। মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা বৃদ্ধিসহ যানজট নিরসনে আধুনিক প্রযুক্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছি। এবারও যেখানে যেটা প্রয়োজন সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজধানীর প্রবেশদ্বারে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যানজটপ্রবণ এলাকাসমূহে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে যানজটের কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যে সমস্ত এলাকায় দুর্ঘটনা হয়ে থাকে এবং হতে পারে, সে সমস্ত এলাকার কাছাকাছি সব সময় সব ধরনের রেকার, ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকর্মীরা থাকবেন। দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিডগান আমাদের পুলিশ ব্যবহার করবে। অতিরিক্ত গতি সম্পন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা তাৎক্ষণিক নেওয়া হবে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আপনারা জানেন ঈদুল আজহার জন্য পশুবাহী যানবাহনের আধিক্য থাকবে। সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে তারা যেন সব সময় রাস্তার বাম পাশের লেন ব্যবহার করে। তারা যেন রাস্তার মধ্যে না আসে বা ডানেও না যায়।
ঈদযাত্রার গাড়িভাড়া নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ঈদে যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকবে। ভাড়া বাড়াবে না। সেটা মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা বলে গেছেন।
ঈদুল আজহার সময় সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নগর-মহানগর, জেলা সদর, উপজেলা শহরসহ সারা দেশে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধে গোয়েন্দা নজরদারি ও পুলিশ-র্যাবের টহল বাড়ানো হবে। বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, রেল স্টেশন এসব স্থানে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রাপ্ত তথ্য মতে সিটি করপোরেশন ও মহানগর জেলাসমূহসহ সারা দেশে মোট চার হাজার ৪০৭টি পশুর হাট বসবে। এটা হয়তো বাড়তেও পারে। প্রতিটি পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হবে। হাটে ওয়াচ টাওয়ার, জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন, পশু চিকিৎসক থাকবেন। পশুর হাটে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।
তিনি বলেন, পশুবাহী গাড়িতে তাদের গন্তব্যস্থান বা কোন হাটে যাবে সেটা লিখে রাখতে হবে। এটার উদ্দেশ্য হলো রাস্তাঘাটে কেউ যাতে জোর করে গাড়ি থেকে পশু নামাতে না পারে। একইসঙ্গে কেউ যাতে চাঁদাবাজি করতে না পারে এটাই হলো মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া রাস্তার ওপর পশুর হাটে তারা কোনো পশু নামাতে পারবে না, রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে না। তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান আছে সেখানেই তারা পশু নামাবে।
মন্ত্রী বলেন, ঈদুল আজহার পূর্বে তিন দিন এবং পরে তিন দিন পচনশীল দ্রব্য ও যাত্রী পরিবহন ব্যতীত অন্য সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকবে। ঈদের পূর্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মে মাসের বেতন সম্পূর্ণ দিতে হবে। একই সঙ্গে বোনাস ঈদের ছুটির আগে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে বিজিএমইএ, বিকিএমইএর প্রেসিডেন্টরা একমত পোষণ করেছেন। সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে ছুটির ব্যবস্থা করবে। যাতে করে যানজটের সমস্যা না হয়। শিল্প এলাকায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অযথা গুজব বা উসকানি দিয়ে যারা অসন্তোষ সৃষ্টি করবে কিংবা প্রয়াস চালাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও শোলাকিয়া মাঠসহ সারা দেশের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ঈদের জামাতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ঈদের সময় মার্কেট ও বাড়িঘরে চুরি-ডাকাতি এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে নিরাপত্তা বাহিনী সচেষ্ট থাকবে এবং সিসি ক্যামেরাগুলো যেন সচল থাকে সেদিকে নজর রাখবে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে পশু পরিবহনের জন্য বিশেষ ক্যাটল ট্রেন চালু থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, কোনো বাল্ক হেড, যাত্রীবাহী স্পিডবোট ও ছোট লঞ্চ রাতে চলাচল করতে পারবেন না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকবে, যাতে এই বাল্ক হেডগুলো রাতে না চলে। এটা সব সময়ের জন্য নির্দেশনা যে, বাল্ক হেড রাতে চলবে না। দুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে। যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানেই তারা ছুটে যাবে এবং সেবা দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৪
জিসিজি/এইচএ/