মৌলভীবাজার: কোলাহলপূর্ণ বাজারের এক কোণায় বিভিন্ন মাছ নিয়ে বসেছিলেন এক বিক্রেতা। এমনভাবে মাছগুলো সাজানো ছিল যাতে ক্রেতাদের দৃষ্টি পড়ে অদেখা মাছের দিকে।
ভেদা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Nandus nandus। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় মাছটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ সেন্টিমিটার। এক সময় দেশের খাল-বিল, হাওরে অহরহ পাওয়া যেত ভেদা মাছ। বর্ষাকালে প্লাবিত ধান বা পাট ক্ষেতেও পাওয়া যেত এই মাছটি। প্রধানত ফসলি জমিতে রাসায়নিক ও কীটনাশকের অত্যধিক ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, জলাশয়ের অভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ মাছটি এখন ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে।
এই মাছটিকে ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এর পুরো শরীরে কালচে-সবুজ দাগের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে। কেউ কেউ মাছটিকে কৈ মাছ ভেবে ভুল করে। তবে এটা ঠিক যে, বাজারে কৈ মাছ প্রচুর পাওয়া গেলেও ভেদা মাছ খুবই কম পাওয়া পায়।
সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলের মাছ বাজারে উঠেছিল এ মাছগুলো। মৌলভীবাজারের হাইল হাওর থেকে ধরা এই মাছগুলো।
মাছবিক্রেতা মনির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ভেদা মাছ এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। আজ হঠাৎ করে মাছগুলো পেয়ে গেলাম। নিলামের মাধ্যমে কিনে নিয়ে নিলাম। প্রতিকেজি বিক্রি করছি ৪শ টাকায়।
শীত মৌসুমে আমাদের হাইল হাওর শুকিয়ে যায়। এজন্য মাছগুলো পাওয়া গেল বলে জানান ওই বিক্রেতা।
ক’দিন পর আবার ভেদা মাছগুলোর দেখা পেয়েছেন’ এমন প্রশ্নে এ মাছবিক্রেতা বলেন, প্রায় আট-নয় মাস আগে একবার বিক্রি করে ছিলাম। আর আজ মাছগুলোর দেখা পেলাম।
মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আরিফ হোসেন এই মাছ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, আমার শৈশব এলাকায় পাব না ভেদা মাছ। আমাদের এদিকে ভেদা মাছ আগে থেকেই ছিল না। আপনাদের সিলেটে এখনো মাছটি আছে। এদিকের হাওর-বিলে এখনো মাঝে মাঝে ধরা পড়ে এ মাছটি। আমি প্রায়ই হাওর-বিল এলাকায় ঘুরে থাকি। তখন এগুলো নজরে রাখার চেষ্টা করি।
স্বাদ এবং প্রাপ্তিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক অন্যান্য মাছের মতো এই ভেদা মাছটি খেতে খুব সুস্বাদু। আইইউসিএন, বাংলাদেশের তালিকা অনুযায়ী এই ভেদা মাছটি সংকটাপন্ন। হাওর বিল, নদী-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাভূমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনের ফলে প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠার এ মাছগুলো ধীরে ধীরে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। দেশের নানা স্থানে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনের ফলে বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
মেশিন দিয়ে হাওর-বিলের পানি একেবারে শুকিয়ে মাছ ধরায় পদ্ধতি মাছের বংশ বাড়ানোর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ কারণে মাছের বংশ চিরতরে বিনষ্ট হয়ে যায় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৫
বিবিবি/এএটি