ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেয়ের ভালো পাসেও অশ্রুসিক্ত ভ্যানচালক বাবা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫২ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৪
মেয়ের ভালো পাসেও অশ্রুসিক্ত ভ্যানচালক বাবা

মাগুরা: মিতা খাতুন এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে।

বাবা ভ্যানচালক কুদ্দুস শেখ জানেন না মেয়ে মিতা খাতুন কি ফল করেছে।

একজন পথে ডেকে বলল কুদ্দুস তোমার মেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। জিপিএ ৫ ভালো না মন্দ তাও জানেন না কুদ্দুস শেখ। পরে সবাই বলেছে তোমার মেয়ে এসএসসি ভালো ফল করেছে। তখন কুদ্দুসের চোখে অশ্রু। এ অশ্রু আনন্দের অশ্রু। তাদের বাড়ি সদরের গোপালনগর গ্রামে।  

কুদ্দুস শেখ দরিদ্র ভ্যানচালক। তার আর কোনো আয় উপার্জন নাই। সারাদিন যা আয় করেন তা দিয়ে খাবারের টাকাই জোটে না। মেয়ের কলেজ ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি। মেয়ের ভালো ফল নিয়ে খুশি হলেও এখন পড়ে গেছেন দুশ্চিন্তায়।

কুদ্দুস শেখ বলেন, দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে মিতা দ্বিতীয়। বড় মেয়ে মুন্নী খাতুন এসএসসি পাস করার পর দারিদ্র্যতার কারণে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে ইউসুফ শেখ স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মেঝো মেয়েকে পড়ালেখা করাতে চান।  দারিদ্রতাই এখন বড় বাঁধা। মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চান কুদ্দুস শেখ।  

মিতা খাতুন জানান, স্কুল ও প্রাইভেট বাদে সে ৭/৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন তিনি। তার স্বপ্ন পূরণ করতে যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান। ভবিষ্যতে তিনি ডাক্তার হতে সবার কাছে সহযোগিতা চান তিনি।  

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীর কুমার দাস, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইকবাল আহম্মেদ কবি ও সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) পবিত্র কুমার সাহার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মিতা বলেন, তাদের সহযোগীতায় আমি ভালো রেজাল্ট করতে পেরেছি। আমি তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ।  

মা আমেনা খাতুন বলেন, তাদের মুখে তিনবেলা খাবারই তুলে দিতে পারি না। মেয়েটি রাতদিন পড়া লেখা করে। তার স্বপ্ন পূরণ করতে সবার প্রতি সহযোগীতা কামনা করছি।

মহম্মদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমীর কুমার দাস জানান, মিতা খাতুন অদম্য মেধাবী। তার শত সমস্যা কষ্ট পার করে এসএসসিতে ভালো ফল করায় আমরা দারুণ খুশি। তিনি অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণা হতে পারে।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পলাশ মণ্ডল জানান, দারিদ্র জয়ী মিতা খাতুনের সাফল্যের খবর পেয়ে তাকে আমরা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। তার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন বলে আশা করি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।