ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্যোগ থেকে উপকূল রক্ষায় প্রয়োজন মজবুত বেড়িবাঁধ

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
দুর্যোগ থেকে উপকূল রক্ষায় প্রয়োজন মজবুত বেড়িবাঁধ ছবি: জি এম মুজিবুর

পাথরঘাটার উপকূল থেকে: সুন্দরবন সংলগ্ন পাথরঘাটা উপজেলা। যার পশ্চিমে বলেশ্বর নদ, পূর্বে বিষখালী ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।

পাথরঘাটা উপজেলাটি দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে উপকূলের রক্ষাকবজ বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় নিম্নাঞ্চল, ঘরবাড়ি বিধ্বস্তসহ কৃষিতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে উপকূলের জীবন-জীবিকায় যেমন বাধাগ্রস্ত হয়, তেমনি সুপেয় পানি, পুনর্বাসনসহ নানা সংকটে পরে উপকূলবাসী।  

দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। কিন্তু এলাকাবাসী এখন আর ত্রাণ চায় না, চায় শক্ত বেড়িবাঁধ। যে বেড়িবাঁধ উপকূলের মানুষদের নিরাপদে রাখবে।

সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদের পাড়ের বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে যদি বাঁধ ভাঙতো তাহলে আমাদের কোনো অস্তিত্ব থাকতো না, তারপরও এই বন্যায় পানি বেড়িবাঁধ ছুঁয়ে ছিল। এখান থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে আমাদের আগের বসতবাড়ি ছিল। কিন্তু সিডরে নিয়ে গেছে। এটাই আমাদের কপাল।

তিনি সিডরের রাতের বিভীষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, এই বেড়িবাঁধ ভেঙে যখন পানি ভেতরে ঢুকে তখন বাঁচার জন্য আমার মেয়ে লিমাকে (৬) নিয়ে ঘর থেকে নেমে যাই। তখন আমার মেয়েটা বলে- বাবা আমি সাঁতার জানি না, আমাকে শক্ত করে ধরো। আমি ওকে শক্ত করে ধরলাম কিন্তু একপর্যায়ে আমার মেয়েকে আর বাঁচতে পারি নাই। হাত থেকে ছুটে গিয়ে পানির স্রোতে ভেসে যায়। ছয় দিন পর পাশের একটি ঝোঁপে তার মরদেহ পাওয়া যায়।  

মজিবুর রহমান আরও বলেন, এই বেড়িবাঁধ যদি না ভাঙতো তাহলে আমাদের ঘর বাড়িও নদীতে বিলীন হতো না আর আমার মেয়েকেও হারাতে হতো না। বেড়িবাঁধ ভেঙে আর যেন মানুষের প্রাণহানি না হয়। তাই আমরা চাই শক্ত বেড়িবাঁধ।  

একই এলাকার সেলিম মিয়া বলেন, সিডরের রাতে আমার ১৪ বছরের মেয়ে শিমু, ভাতিজাসহ কয়েকজন মারা যায়। সেই থেকে আমরা শক্ত বেড়িবাঁধের দাবি করছি। প্রতি বছর বন্যায় বাঁধে কিছু মাটি দেয় কিন্তু স্থায়ী কোনো বাঁধ আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। রিমালে তাণ্ডবেও ক্ষতি কম হয়নি। এই বেড়িবাঁধ ভাঙলে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। আমরা ত্রাণ চাই না, মজবুত বেড়িবাঁধ চাই। বেড়িবাঁধ মজবুত থাকলে, নিরাপদ থাকবে উপকূল।

উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, বেড়িবাঁধ হচ্ছে উপকূলের রক্ষাকবজ, বেড়িবাঁধ থাকলে উপকূলের মানুষ নিরাপদ থাকবে। আমরা দীর্ঘ বছর ধরে টেকসই বেড়িবাঁধের জন্য আন্দোলন, মানববন্ধন, স্মারকলিপি দিয়েছি, মন্ত্রী ও সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন কিন্তু আজ পর্যন্ত বেড়িবাঁধ হয়নি। আমরা যতই এসডিজি দাবি করি, এসডিজি অর্জন করতে চাই। কখনই অর্জন সম্ভব নয়, উপকূলে যদি স্থায়ী বেড়িবাঁধ শক্ত না হয়। সমন্বিতভাবে এসডিজি অর্জন করতে হবে। এ জন্য উপকূল বা উপকূলের জীবন-জীবিকা এবং বেড়িবাঁধ বাদ দিয়ে নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।