ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নির্বাচনে বারবার হারার শোধ নিতে নড়াইলের আনিচুরকে হত্যা: র‍্যাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৪
নির্বাচনে বারবার হারার শোধ নিতে নড়াইলের আনিচুরকে হত্যা: র‍্যাব

ঢাকা: নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার কলাবাড়িয়া গ্রামের শেখ আনিচুর রহমানের (৪১) ভাই শেখ সোহেল রানার কাছে বার বার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আসছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী জুলফিকার। নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে তাদের দুই পক্ষের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক ছিল।

পূর্ব শত্রুতার জেরে ভুক্তভোগী আনিচুরকে ৬ মাস আগে হত্যার পরিকল্পনা করে জুলফিকার। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাহিদুলকে।  পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১ মে বিকেলে ভুক্তভোগীকে ইটের ভাটায় ডেকে নিয়ে শামীম শেখ ও জুলফিকারের নেতৃত্বে হাত-পায়ের রগ কেটে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

সোমবার (১০ জুন) রাতে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় র‍্যাব-৩ এবং র‍্যাব-৬ যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিরা হলেন মূল পরিকল্পনাকারী ও অন্যতম প্রধান আসামি জাহিদুল শেখ (৫০), শামীম শেখ (২৫), হাছানুর রহমান রিপন (৫০), জুলফিকার (৪৫), রাশিদুল শেখ (২৪), লিটু (২৮), হিটু (২৫), আজিজ শেখ (২৫), হানিফ শেখ (২৮), মুশফিকুর রহিম (২২), তৈয়েবুর রহমান (৫৫), শরিফুল শেখ (৩৮), ও সাইফুল শেখ (৪০)।

মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ৩১ মে নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার কলাবাড়িয়া এলাকায় শেখ আনিচুর রহমানকে আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ধাওয়া করে ইট-ভাটায় নিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ২ জুন ভিকটিমের ভাই শেখ সোহেল রানা বাদী হয়ে নড়াগাতী থানায় ৩১ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিরা নিজ এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে আত্মগোপন করেন। এর প্রেক্ষিতে র‍্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে র‍্যাব-৩ এর ও র‍্যাব-৬ যৌথ আভিযান চালিয়ে ১০ জুন রাত ৯টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ মোট ১৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক মো. ফিরোজ কবীর বলেন, ভিকটিমের ভাই ও মামলার বাদী শেখ সোহেল রানা কলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ০২ নম্বর ওয়ার্ডের একজন নির্বাচিত সদস্য। আসামি জুলফিকার তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে তাদের দুই পক্ষের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক ছিল। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ভিকটিম আনিচুরকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার জাহিদুল তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার মূল পরিকল্পনাকারী জাহিদুল তার সহযোগী হাছানুর রহমান রিপন এবং মঞ্জুর শিকদারের সহায়তায় সুপরিকল্পিতভাবে গত ৩১ মে বিকেলে ভিকটিমকে নিজ বাড়ি থেকে ডেকে জনৈক টুকু মোল্লার ফোর ব্রাদার্স নামক ইট ভাটার ভেতরে নিয়ে যান। ইট ভাটার ভেতরে গ্রেপ্তার শামীম শেখ ও জুলফিকারের নেতৃত্বে রাশিদুল, রহিম, লিটু, হিটু, আজিজ, শহীদ শেখ, ইরফান শেখসহ ১২-১৩ জনের একটি দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত দলকে দেখে প্রাণের ভয়ে দৌড়ে ভাটার পাশে বাঁশের বেড়া দেওয়া একটি ঘরে আশ্রয় নেন আনিচুর।

যেখানে ওঁৎ পেতে ছিল গ্রেপ্তার হানিফের নেতৃত্বাধীন মনিরুজ্জামান, সেকন শেখ, নাইম শেখসহ ০৪-০৫ জনের একটি দল। তারা তাকে ধরতে গেলে ভিকটিম বেড়া ভেঙে পাশের জমিতে পড়ে গেলে হুকুমদাতা ওসিকুর রহমানের নির্দেশে ও মূল পরিকল্পনাকারী জাহিদুলের নেতৃত্বে হাছানুর, শামীম শেখ, জুলফিকার, রাশিদুল ও শিহাব শেখ চাপাতি, ছ্যানদা ও রামদা দিয়ে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।

হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে লে. কর্নেল ফিরোজ বলেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল ছয় মাস আগে। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিল্পনাকারী ছিল গ্রেপ্তার জাহিদুল ও নির্দেশদাতা ছিল ওসিকুর। ছলে-বলে পরিকল্পিতভাবে সুবিধাজনক স্থানে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল হাছানুর ও মঞ্জুরের। ইট ভাটায় হত্যার প্রথম প্রচেষ্টা ছিল শামীম শেখ ও জুলফিকারের নেতৃত্বাধীন ১২- ১৩ জনের একটি দলের। দ্বিতীয় প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের নেতৃত্বে ছিল গ্রেপ্তার হানিফের নেতৃত্বাধীন ৪-৫ জনের একটি দলের। অবশেষে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন মূল পরিকল্পনাকারী জাহিদুল ও তার সহযোগী হাছানুর, শামীম শেখ, জুলফিকার, রাশিদুল ও শিহাব শেখসহ অন্যান্য আসামিরা।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিষয়ে ফিরোজ বলেন, আসামি জাহিদুল আনিচুর হত্যা মামলা ছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দলের খেলোয়াড় কাইয়ুম শিকদার হত্যাসহ ধর্ষণ মামলা ও যৌতুকের মামলার আসামি। জাহিদুল শেখ পেশায় একজন খাবার হোটেল ব্যবসায়ী। আসামি শামীম শেখও জাতীয় কাবাডি দলের খেলোয়াড় হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী সহিংসতাকে কেন্দ্র করে নড়াগাতী থানায় চারটি মামলা রয়েছে। আসামি শামীম পেশায় স্থানীয় একটি স্কুলের অফিস সহায়ক। আসামি জুলফিকারও বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দলের খেলোয়াড় কাইয়ুম শিকদার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তার বিরুদ্ধে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নড়াগাতী থানায় দুইটি মামলা আছে। তিনি পেশায় একজন কৃষক।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্ন জবাবে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক ফিরোজ কবীর বলেন, আসামিরা পেশাদার খুনি। তারা বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময় হত্যাকাণ্ড চালিয়ে থাকেন।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৪
এমএমআই/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।