ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গলার কাঁটা খ্যাত সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে স্বস্তির ঈদযাত্রা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৪
গলার কাঁটা খ্যাত সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে স্বস্তির ঈদযাত্রা

সিরাজগঞ্জ: আর মাত্র একদিন পর সোমবার (১৭ জুন) মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপনের জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করা উত্তরাঞ্চলের কর্মজীবী মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে দুদিন ধরে।

সড়ক-মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কসহ সিরাজগঞ্জের সব রুটেই গাড়ির চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্তও কোনো যানজট বা দুর্ভোগ নেই সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে। এ রুট দিয়ে উত্তরের যাত্রীরা স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারছেন।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম রুট হয় সিরাজগঞ্জের মহাসড়কগুলো। প্রতি বছরই এ রুটে গাড়ির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে যানজট, দুর্ঘটনা আর দুর্ভোগের রুটে পরিচিত হয় সিরাজগঞ্জের সড়কগুলো। বিশেষ করে ঈদযাত্রা মানেই উত্তরাঞ্চলবাসীর গলার কাঁটা হিসেবে খ্যাত হয়ে এ জেলার ১০৪ কিলোমিটার মহাসড়ক। গত ১০-১২ বছর ধরে ঈদযাত্রায় ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে মানুষ।

তবে গত ঈদুল ফিতর থেকেই এ রুটের পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করে সড়ক দিয়ে। সেই ধারাবাহিকতা রয়েছে কোরবানির ঈদেও। চলতি ঈদুল আজহা উপলক্ষে দুদিন ধরে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। এখনও এ রুটে কোনো সমস্যা হয়নি। ফলে গলার কাঁটা হিসেবে খ্যাত বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সড়ক ও হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা মহাসড়কের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে।

শনিবার (১৫ জুন) কড্ডার মোড় ও নলকা এলাকায় দেখা যায়, সকাল থেকেই যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ। দূরপাল্লার বড় বাস ছাড়াও মিনিবাস, পিকআপভ্যান, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে চেপে ঘরে ফিরছেন হাজার হাজার মানুষ। একটি গাড়ির পেছনে আরেকটি গাড়ি রয়েছে। তবে কোথাও যানজট চোখে পড়েনি।

ট্রাকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন নাটোরের সাদ্দাম হোসেন, জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, অনেক বছর ধরেই এত সহজে এই রুট পার হতে পারিনি। এবার খুব ভালো লাগছে। তবে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার দিকে সামান্য যানজট থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে।  

দূরপাল্লার একটি বাসে চেপে কড্ডার মোড়ে এসে নামেন বেসরকারি চাকরিজীবী সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, এত সহজে বাড়ি আসতে পারব ভাবতেও পারিনি।  

ট্রাকচালক তাহের আলী,  পোশাক কারখানার শ্রমিক জোবেদা, রত্নাসহ অনেকেই বলেন, সিরাজগঞ্জে আর সেই দুর্ভোগ নেই। এক সময়ের গলার কাঁটা ছিল। এখন রাস্তাঘাট ভালো হওয়ায় যানজট নেই।  

জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, জেলার ১০৪ কিলোমিটার মহাসড়কে ৮০০ জেলা পুলিশ ও ২০০ হাইওয়ে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় পড়া যানবাহনকে দ্রুত সরানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ছয়টি রেকার ও হতাহত হলে তাদের জন্য রয়েছে চারটি অ্যাম্বুলেন্স। হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়া হাটিকুমরুল গোলচত্বর, ঝাঐল ওভার ব্রিজ ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বরে ড্রোন ক্যামেরা উড়িয়ে সড়ক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের করা হচ্ছে।

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এবারের ঈদযাত্রা নির্ঝঞ্ঝাট করতে আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। হাটিকুমরুল গোলচত্বরে ওয়াচ টাওয়ারের পাশাপাশি যানবাহনের পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে ড্রোন ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তাছাড়া এ বছর রাস্তাঘাটও ভালো রয়েছে। এ কারণে মানুষ স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারছেন।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ মাঠে রয়েছে। জেলা পুলিশের ৮ শতাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। রয়েছে ৩৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত, ১৯টি টহল টিমের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও মহাসড়কে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মনিটরিংয়ের জন্য জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। সবার সহযোগিতায় ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত কোনো ভোগান্তি হয়নি। আশা করছি, এবার কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।