ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বলতে কেউ নেই, তাই মনের কথা কারে কই’

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৪
‘পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বলতে কেউ নেই, তাই মনের কথা কারে কই’ শেখ জলিল

ফরিদপুর: ‘কত ঈদ আসে-যায়, শুধু পথ চেয়ে থাকি, কেউ বুঝি আসছে খোঁজ নিতে আমার! কেউ আর আসে না আমার খোঁজ নিতে। পরক্ষণে ভাবি, আমার তো পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বলতে কেউ নেই, মনের কথা কারে কই! ঈদের যে আনন্দ, যে উল্লাস কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাওয়া সেটা আর নেই।

বোবায় যেমন স্বপ্ন দেখে, মনের কথা মনে রাখে। আমাগোও তাই বাজান। ’

কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা এলাকায় অবস্থিত ‘শান্তি নিবাস’ নামে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা শেখ জলিল। বয়স সত্তরোর্ধ্ব তার। গত দুবছর আগে এই বৃদ্ধাশ্রমে তার মাথা গুঁজার ঠাঁই হয়।  

এক সময় ফরিদপুর শহরের ভাজনডাঙ্গা এলাকার একটি ছনের ঘরে বসবাস করতেন তিনি। বাবা শেখ জয়নুদ্দিন আর মাতা বরু খাতুনকে সেই কবে হারিয়েছেন মনে নেই এই বৃদ্ধার। স্ত্রী সাহেদা খাতুনকে নিয়ে এক সময় সংসার পেতে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন জীবনের বাকি সময়। কোলজুড়ে সোনাই নামে একটি মেয়েও এসেছিল এই পৃথিবীতে। তবে নয় বছর বয়সে ডায়রিয়া মেয়েটাকে কেঁড়ে নিয়ে যায়। এরপর অভিমান আর ঝগড়া করে স্ত্রী ছেড়ে যায় এই বৃদ্ধাকে। অতঃপর ২০২৩ সালে তার স্ত্রীও পাড়ি জমায় পরপারে।  

বৃদ্ধ শেখ জলিল বলেন, ‘বাপ-মা মারা গেছে, বউ-বাচ্চা মারা গেছে। পৃথিবীতে কেউ নেই আমার। ঈদ যখন আসে এই বৃদ্ধাশ্রমে নাস্তা খেয়ে শুয়ে থাকি। জামাকাপড় দেয় তবে কারে পড়ে দ্যাহাবো, আপনজন নাই, কার বাসায় যাব? বাজান, কেমনে বুঝাব যে কত কষ্ট লাগে, বুকটা খাঁ খাঁ করে। ’ 

এ বিষয়ে শান্তি নিবাসের (বৃদ্ধাশ্রম) উপ-তত্ত্বাবধায়ক তাহসিনা জামান বলেন, এখানে যারা থাকেন, তাদের ভালো রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। ঈদ উপলক্ষে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় ও ঈদের দিন মাংস, পোলাও, সেমাইসহ সব ধরনের খাবার সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যে যেধরনের পোশাক পরে তাদের জন্য সেই ধরনের পোশাকই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। তবে জনবল বাড়ানোর জন্য আমরা ঊর্ধ্বতনদের কাছে চাহিদা দিয়েছি, আশা করি,এ সংকট বেশি দিন থাকবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।