ঢাকা, শনিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙনে ৫ শতাধিক বাড়ি বিলীন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৪
সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙনে ৫ শতাধিক বাড়ি বিলীন

সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জে তৃতীয় দফায় দ্রুত গতিতে বাড়ছে। সে সঙ্গে জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার কাজিপুর, সদর ও শাহজাদপুর উপজেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আর গত এক মাসে ৫ শতাধিক বসতভিটা গিলে খেয়েছে যমুনা।

এদিকে গত দুদিন ধরে যমুনার পানি আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।

বুধবার (৩ জুলাই) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সমতলে রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৪২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)।  মঙ্গলবার এ পয়েন্টে যমুনার পানি বাড়ে ৩৪ সেন্টিমিটার। দুদিনে বাড়ে ৭৬ সেন্টিমিটার।

অন্যদিকে কাজিপুর মেঘাই পয়েন্টে পানি সমতলে রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ মিটার। এ পয়েন্টে নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৪০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)। মঙ্গলবারও ৪০ সেন্টিমিটার বাড়ে। দুদিনে বাড়ে ৮০ সেন্টিমিটার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ও শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর এবং কৈজুরী ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেললেও বর্ষা মৌসুমে সেটা কোনো কাজেই আসছে না।

খাস রাজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দক্ষিণ খাসরাজবাড়ী গুচ্ছগ্রামের ৬০-৭০টি বাড়িঘর ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে চলে গেছে। গুচ্ছগ্রামের মানুষগুলো ফের ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

সদর উপজেলার কাওয়কোলা ইউনিয়নে একমাসে দুইশতাধিক বাড়িঘর ও তিন হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে হাটবয়ড়া, দোগাছি, বড়কয়ড়া, ছোটকয়ড়া, চন্ডাল বয়ড়া, বেড়াবাড়ি, কৈগাড়ি, দোরতা ও বর্ণি গ্রামের আরো পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, চার কিলোমিটার পাকা রাস্তা, কয়েকশ একর ফসলি জমি, বন্যা ও দুর্যোগকালিন আশ্রয়কেন্দ্র মুজিবকেল্লা, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীন ১২৬টি ব্যারাক, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ছয়টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল এবং একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন। এরই মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সী।

শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে যমুনার ডানতীরে দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙন চলে আসছিল। গত এক মাসে এ এলাকার প্রায় পৌনে দুইশ বসতভিটা ও ৩০০ একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। যমুনার পানি বাড়ার কারণে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়েছে। ভাঙন শুরু হয়েছে পার্শ্ববর্তী কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁটপাচিল গ্রামেও। গত তিনদিনের ব্যবধানে এ দুটি ইউনিয়নে অন্তত ৪০-৫০টি বাড়িঘর বিলীন হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।  

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চলে ভাঙন চলে আসছে। মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প দিলেও তিন বছরেও তা শেষ হয়নি। ফলে কিছুতেই ভাঙনমুক্ত হচ্ছে না এ অঞ্চলবাসী।

কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, কয়েকদিন ধরে হাঁট পাচিলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। কোবাদ মাস্টারের একটি দোতলা বাড়ি এবং পাশেই বিশাল গরুর খামার নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও। আমাদের এলাকাবাসী কোনো ত্রাণ চায় না, এক বান্ডিল টিনও চায় না। তারা চায় দ্রুত নদীভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, জালালপুর ও কৈজুরী  ইউনিয়নের হাঁটপাচিল এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগে ভাঙন কমেছিল পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। দুটি এলাকায় তিনদিনে অন্তত ৪৫ থেকে ৫০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন কবলিতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে পাউবো সূত্র জানায়, ২০২১ সালে যমুনার ভাঙনরোধে শাহজাদপুরের এনায়েতপুর থেকে কৈজুরী পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র অর্ধেক শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ জুন পর্যন্ত বাড়োনো হয়েছে।  

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, নদী ভাঙনরোধে আমরা প্রকল্পের পাশাপাশি জিওটিউব ডাম্পিং শুরু করেছি। এছাড়া পাউবোর ড্রেজার দিয়ে আমরা চ্যানেলটিকে প্রশস্ত করার চেষ্টা করছি। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য খনন কাজ চলছে। সেই সঙ্গে ভাঙনরোধে কাজ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।