ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রবেশ ফি পাঁচ গুণ করার পর ফাঁকা বোটানিক্যাল গার্ডেন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২৪
প্রবেশ ফি পাঁচ গুণ করার পর ফাঁকা বোটানিক্যাল গার্ডেন বোটানিক্যাল গার্ডেনের টিকিট কাউন্টারে নেই দর্শনার্থীদের লাইন

ঢাকা: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজধানীর মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ১০০ টাকা প্রবেশ ফি করায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কমেছে। বলতে গেলে  দর্শনার্থী ফাঁকা বোটানিক্যাল গার্ডেন।

 

হঠাৎ টিকিটের দাম পাঁচগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ইজারাদারদের দাবি, অন্যান্য দিনের তুলনায় ২০ শতাংশ দর্শনার্থী প্রবেশ করেননি।

বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। আগে উদ্যানে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদের জনপ্রতি ২০ টাকা ফি দিতে হতো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টিস্নাত দিনে অন্যান্য দিনের তুলনায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ অনেকটাই কম। টিকিটের দাম বাড়ায় কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষার্থী ও যুগলরা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, প্রবেশ ফি বাড়ার কারণে আমরা ফিরে যাচ্ছি। আমরা জানতাম না টিকেট ১০০ টাকা করেছে। তবে আগামীতে এলে প্রস্তুতি নিয়ে আসব।

কুয়াকাটা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি আগেও বহুবার এসেছি কিন্তু আর আসবো না। টিকিটের দাম বাড়াটা আমি জানি যেহেতু পরিবার নিয়ে এসেছি তাই একবার ঘুরিয়ে নিয়ে গেলাম।  

এতো টাকা দিয়ে আর এখানে আসবেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সোহেলা সরকার

এ দর্শনার্থী আরো বলেন, এখানে পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য আসা। টিকিটের দাম এভাবে বাড়ানো মানে মানুষের পকেট কাটার মতো। এখানে দেখার তেমন কি আছে যে ১০০ টাকা দিতে হবে! সামনে এ এলাকায় এলে  চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করব।

টিকিটের দাম বাড়ায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে ইজারাদার মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হঠাৎ করে প্রবেশ ফি বেড়ে যাওয়ায় সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ নেই বললেই চলে।  

মানুষের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার কারণে দর্শনার্থীরা আসছেন না বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, ২০ টাকার টিকিট ৪০ টাকা হলেও এটা যৌক্তিক ছিল। কিন্তু এভাবে দাম বাড়ার দর্শনার্থীরা কম আসছেন।

এ ব্যাপারে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, মিরপুর, ঢাকা এর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সোহেলা সরকার বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে প্রবেশ ফি বাড়ানো হয়েছে। আমরা শুধু এটা বাস্তবায়ন করছি। তবে কয়েকদিন গেলে বোঝা যাবে যে, এটার প্রভাব কেমন পড়েছে।  

এর আগে প্রবেশ ফি বাড়ানো নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বন অধিশাখা-১ থেকে গত ২১ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।  

এতে বলা হয়েছে, ১২ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ১০০ টাকা প্রবেশ ফি দিতে হবে। আর এর চেয়ে কম বয়সীদের জন্য প্রবেশে ফি দিতে হবে ৫০ টাকা।

দর্শনার্থী ফাঁকা বোটানিকাল গার্ডেন

নগর–পরিকল্পনাবিদ ও বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এমনিতেই ঢাকায় সাধারণ মানুষের যাওয়ার জায়গা কম। শিশুরা গাছপালা তথা সবুজ দেখতে পায় না। এত অধিক হারে ফি বাড়ানোকে তারা অনুচিত ও অযৌক্তিক মনে করছেন।

তবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যারা অগ্রিম অনুমতি নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাবে, তাদের ১০০ জনের একটি দলের জন্য ১ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। এর চেয়ে বেশিজনের দল হলে দেওয়া লাগবে দেড় হাজার টাকা। গবেষকেরাও এই ফির আওতায় থাকবেন।

প্রজ্ঞাপনে বিদেশি পর্যটক ও শরীরচর্চার জন্য উদ্যানে যারা নিয়মিত হাঁটতে যান, তাদের জন্যও আলাদা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যেক বিদেশি পর্যটকের জন্য দিতে হবে এক হাজার টাকা বা সমমূল্যের ইউএস ডলার। আর উদ্যানে হাঁটতে যাওয়া ব্যক্তিদের একটি বাৎসরিক কার্ড করাতে হবে।  

এর জন্য ফি দেওয়া লাগবে ৫০০ টাকা। তবে অবস্থান করা যাবে মাত্র এক ঘণ্টা। অথচ শরীরচর্চার জন্য আগে উদ্যানে গেলে কোনো রকম ফি লাগত না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২৪
এসএমএকে/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।