ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এনআইডি জালিয়াতির অভিযোগ

অব্যাহতি পেতে পারেন খুনি মোসলেমের সন্তানরা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৪
অব্যাহতি পেতে পারেন খুনি মোসলেমের সন্তানরা

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী ও জেল হত্যা মামলার আসামি রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের নাম পরিবর্তন করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছেন তার সন্তানরা; এমন অভিযোগের তদন্ত প্রায় শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এতে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।

ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ওই অভিযোগ পাঠিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। এরপরই জড়িতদের ধরতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সংস্থাটি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী ও ১৯৭৫ সালের জেল হত্যার আসামি রিসালদার মোসলেম উদ্দিন তার নাম পবির্তন করে মো. রফিকুল ইসলাম খান নামে পরিচিত হয়েছেন এবং পলাতক রয়েছেন মর্মে এনটিএমসি হতে প্রাপ্ত পত্রে উল্লেখ রয়েছে। তার ছয় ছেলে-মেয়ে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম রিসালদার মোসলেম উদ্দিন পরিবর্তন করে মো. রফিকুল ইসলাম খান উল্লেখ করেছেন। ওই জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তিন ছেলে-মেয়ে উত্তোলনকৃত পাসপোর্ট এবং এক ছেলে ড্রাইভিং লাইসেন্সেও পিতার নাম পবির্তন করে মো. রফিকুল ইসলাম খান অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়া রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে-মেয়ে কর্তৃক জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য জাতীয় ডাটাবেজে পিতার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ মর্মেও পত্রে উল্লেখ করা হয়। এই অবস্থায় জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম মোসলেম উদ্দিন পরিবর্তন করে রফিকুল ইসলাম খান অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে ইসিতে পাঠানো ওই পত্রে সঙ্গে জুড়ে দেওয়া তালিকায় বলা হয়, মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান, মাহমুদুল ইসলাম খান, মজিদুল ইসলাম খান, মো. মহিদুল ইসলাম খান, মো. সাজিদুল ইসলাম খান ও মেয়ে সানাজ খান; তারা তাদের এনআইডিতে পিতার নাম পরিবর্তন করে মো. রফিকুল ইসলাম খান করে নিয়েছেন। এদের মধ্যে আবার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান, মো. মহিদুল ইসলাম খান ও সানাজ খান পাসপোর্টেও পিতার নাম মো. রফিকুল ইসলাম খান করে নিয়েছেন। আর মাহমুদুল ইসলাম খান তার ড্রাইভিং লাইসেন্সে পিতার পরিবর্তন করে মো. রফিকুল ইসলাম খান করে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইসির এনআইডি মহাপরিচালক জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদন পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত প্রায় শেষ। এতে যে চিত্র পাওয়া গেছে তা হলো মোসলেম উদ্দিন নিজেই তার নাম পরিবর্তন করে মো. রফিকুল ইসলাম খান নাম ধারণ করেছিলেন৷ পরবর্তীতে তার সন্তানরাও পিতার নাম হিসেবে ওই নাম ব্যবহার করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার সময়ও তারা ওই নামই ব্যবহার করেছেন। কোনো জালিয়াতি বা পরিচয় গোপন করে নাম পরিবর্তন করেননি। এছাড়া ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা থেকেও জানা গেছে, সেখানে একই নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কাজেই এনআইডি সংশোধনের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করা হয়নি। শুরু থেকেই এনআইডিতে একই নাম ছিল। তাই জালিয়াতির মাধ্যমে নাম পরিবর্তনের অভিযোগ থেকে তারা অব্যাহতি পেতে যাচ্ছেন।

ইসি সচিব শফিউল আজিম এ নিয়ে বলেন, আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখছি। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রত্যেকটি বিষয় দেখা হচ্ছে। সবকিছু চূড়ান্ত হলেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র আইন অনুযায়ী, মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনআইডি করলে বা তথ্য পরিবর্তন করলে তা অপরাধ। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জেল, জরিমানা করার বিধান রয়েছে।

খুনি মোসলেম উদ্দিন ভারতে পলাতক হিসেবে আছেন৷ আবার তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করেছেন বলেও কথিত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৪
ইইউডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।