ঢাকা: পণ্য বহুমুখীকরণের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, গালফ অঞ্চল, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর বাজারে রপ্তানি আয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (জুলাই ১৪) সকালে রাজধানীর ওসামানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখায় ২০২১-২২ অর্থবছরের রপ্তানি পদক পেয়েছে ৭৭টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৭৬টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় রপ্তানি পদক এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি পদক দিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিছু রপ্তানি পণ্যের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। তাই আমাদের রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের আর একটি কথা বলব, আসলে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ে ইউরোপীয় দেশগুলো কিংবা আমেরিকাই বলেন, তাদের মূল্যস্কীতি বেশি এবং অর্থনীতি কিন্তু খুব চাপের মুখে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমাদের কিন্তু নতুন সুযোগ আছে। মিডল ইস্টে, গালফ কান্ট্রি, আফ্রিকা, সাউথ এশিয়া, সাউথ-ইস্ট এশিয়া, ইস্ট এশিয়ান কান্ট্রিগুলো, ইস্ট ইউরোপীয় কান্ট্রিগুলো এদের সাথে যত বেশি আমরা যোগাযোগ রাখতে পারব, আমাদের রপ্তানি বহুমুখিকরণ করতে পারব। এই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে। এজন্য আমরা ইতোমধ্যে কাজ করছি। মাঝে মাঝে প্রতিনিধিও পাঠাচ্ছি এসব জায়গায়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদেরও বলব, এসব দেশের দিকে আপনারা আরও বেশি করে নজর দেন। কারণ যেসব দেশের সঙ্গে এত দিন আমরা (রপ্তানি বাণিজ্য) করতাম, তাদের ক্রয়ক্ষমতাও কমে গেছে, দারিদ্র্যের হার বেড়ে গেছে, সেখানকার অবস্থা হয়তো ওপর দিয়ে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু সেসব দেশে যারা থাকে তারা জানে। সেজন্যই আমাদের নতুন নতুন জায়গা এবং নতুন নতুন পণ্য খুঁজতে হবে।
রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা কেবল আরএমজি পণ্যের ওপরই নির্ভরশীল থাকব কেন? ট্রেন্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের পোশাকের ডিজাইনগুলো পরিবর্তন করতে হবে। সরকার এজন্য বেসরকারি খাতের সহায়তায় ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছে, কেননা এক্ষেত্রে গবেষণারও প্রয়োজন রয়েছে।
বর্তমান যুগ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির যুগ এবং সেভাবেই বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দেশের বাজারে আমরা ঢুকতে পারব, সেটা সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা করব কিন্তু ব্যবসায়ীদেরও নিজেদের পার্টনার নিজেদের খুঁজে নিতে হবে। সেদিকেও আপনাদের নিজেদের দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের উৎপাদন যেমন বাড়াব, রপ্তানিও বাড়াব আবার দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবেও আমরা এগিয়ে যাব।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘরে ঘরে ইন্টারনেট, ছেলে মেয়েদের জন্য কম্পিউটার ট্রেনিং ও কম্পিউটার ইনকিউবেশন সেন্টার করে দিয়ে কারিগরি শিক্ষা ও ভোকেশনাল ট্রেনিংকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব যখন আসবে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের জনশক্তি তৈরি করা-এটাও আমাদের জন্য প্রয়োজন। সেভাবে উপযুক্ত জনশক্তি তৈরিতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে।
তিনি বলেন, স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়ে এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের যুব সমাজ যাতে এগিয়ে আসে, এজন্য ‘কোম্পানি আইন’ সংশোধন করে সরকার ‘ওয়ান ম্যান কোম্পানি’ করার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনে নারীদের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকার ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে, সেখানে নারীরা চাইলে আলাদাভাবে প্লট নিয়ে নিজের ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। কারণ আমি চাই আমাদের সমাজে মেয়েরাও এগিয়ে আসুক এবং তারাও এই ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত হোক।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৪
এমইউএম/এমজেএফ