ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৯ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না? প্রশ্ন শেখ হাসিনার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৪
নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না? প্রশ্ন শেখ হাসিনার

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সমর্থন জানানো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান দেওয়াকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।

সোমবার (১৫ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমূহের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর’ এবং ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

গতকাল রোববার (জুলাই ১৪) সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে থাকা এসব শিক্ষার্থীদের মিছিল থেকে ‘আমি কে? তুমি কে? রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

রোববার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে কোটা ইস্যুতে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করার সময় সাংবাদিক এবং প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ করেছেন এবং তাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন। এর প্রতিবাদে রাতে তারা বিক্ষোভ করে। তবে আওয়ামী লীগ ও সরকার সমর্থকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ভুল ব্যাখা করা হয়েছে। সরকার সমর্থকদের অনেকে সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ার লাইভ থেকে বিক্ষোভকারীদের আবারও শোনার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার বাহিনী যেভাবে এদেশে অত্যাচার করেছে। … তাদের সেই অত্যাচার, রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি; তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না। ’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা, তাদের এই অবদান ভুললে চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে, এখানে শান্তি কমিটিতে, কেউ রাজাকার কমিটিতে ছিল, কিন্তু অনেকে মানুষের ক্ষতি করেনি। কিন্তু যে বাহিনীগুলো তারা তৈরি করেছিল, তাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল এবং তাদের দিয়ে মানুষের ক্ষতি করতো, অত্যাচার করতো, লুটপাট করতো, গণহত্যা চালাতো। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, তাদের বিচার করে, অনেকের ফাঁসিও দিয়েছি। তাদের বিচারে যারা নির্যাতিত তারা ন্যায়বিচার পেয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য এখন যখন শুনি মেয়েরাও স্লোগান দেয়, কোন দেশে আমরা আছি, এরা কী চেতনায় বিশ্বাস করে? কী শিক্ষা তারা নিলো? কী তারা শিখলো?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের, জাতির পিতার একটি ডাকে এই দেশের মানুষ, ঘর-বাড়ি, পরিবার সব কিছু ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধে গেছে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে। আর এই যারা বাহিনীতে (রাজাকার-আল বদর-আল শামস) ছিল তারা এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। সেটা ভুলে গেলে চলবে না। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সেই শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিয়ে; তাহলেই এদেশ এগিয়ে যাবে। ’৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় ছিল ২১ বছর, তারপর ৯ বছর দেশকে কী দিতে পেরেছে? কিচ্ছু দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি। যখন ক্ষমতায় এসেছি মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ আজ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। বিশ্বের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশ। সেই দলটাতো থাকতে হবে। ’

দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই, এই বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। মাথা নত করে চলবে না। বিশ্ব দরবারে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলবো। সেই বিশ্বাস নিয়ে আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৪
এমইউএম/এমএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।