ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাঝরাতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
মাঝরাতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক

বরিশাল: দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা পর বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) রাত পৌনে ১ টার দিকে বরিশাল নগরের সিএন্ডবি পুল এলাকা থেকে অবরোধকারীদের হটিয়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে শ্রমিক লীগ ও ছাত্র লীগের নেতাকর্মীরা।

এর আগে রাত পৌনে ১২ টার দিকে কয়েকশত মোটরসাইকেল নিয়ে শ্রমিক লীগ ও ছাত্র লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় যায়। তাদের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা প্রথমে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ, চৌমাথাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সরে যায়। এতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হলেও কিছুক্ষণ পরে নগরের সিএন্ডবি ১ নম্বর পুল এলাকায় সড়ক অবরোধ করে অজ্ঞাত বিক্ষোভকারীরা।

এসময় তারা বেশ কয়েকটি যানবাহনের গ্লাস ভাঙচুর করে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী পিকআপ চালক হানিফ। তিনি বলেন, একটি বাসের গ্লাস ভাংচুরের পরপরই বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কটি অবরোধ করে। ফলে সড়কের দুই প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পরে যায়। এরপর স্থানীয় কয়েকশত মোটরসাইকেল লোকজন ঘটনাস্থলে আসলে অবরোধকারীরা পালিয়ে যায়। যে টুকু বুঝতে পেরেছি মোটরসাইকেলে আসা লোকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।

তিনি বলেন, এরপর মহাসড়কের ওপর প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে দিলে পুনরায় যান চলাচল শুরু হয়।

এদিকে অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল আমিন জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল বহর দেখেই অবরোধকারীরা পালিয়ে যায়। আর যেটুকু দেখেছি তাতে মোটরসাইকেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারীরা ছিলেন।

এদিকে কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের করা আন্দোলন নিয়ে বরিশালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা ১১ টায় প্রথমে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করে মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা কিছুক্ষণ পর চলে গেলেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদে মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখে। এরপর বেলা ১২ টার দিকে চৌমাথা এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী ও তাদের সমর্থকরা মহাসড়কের আরেক অংশ অবরোধ করে। তবে আন্দোলনকারীদের মারমুখী আচরণে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে গড়ায়। এরপর দিনভর নথুল্লাবাদ ও চৌমাথা এলাকা ঘিরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশও তাদের দমাতে টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করে। যা দফায় দফায় বেলা ১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলে।

আর এরমধ্যে আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে ও মারধরে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূইয়াসহ তিন সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়। এছাড়াও ইটের আঘাতে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ফজলুল করিমসহ বেশ কিছু পুলিশ সদস্য কমবেশি আহত হয়। সেইসাথে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট ও লাঠিপেটায় কমবেশি আহত হন। আর এ সময়ের মধ্যে জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া কোন যানবাহন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের এ অংশ দিয়ে চলাচল করতে পারেনি।

রাত ১০ টার দিকে প্রথমে নথুল্লাবাদ থেকে পুলিশ সরে যায় এবং পরবর্তীতে চৌমাথা এলাকা থেকেও তারা সরে যান। পুলিশ সরে যাওয়ার পর আন্দোলনকারীরা নথুল্লাবাদ এলাকায় জড়ো হয়ে সড়কে অগ্নিসংযোগ ঘটায় এবং নথুল্লাবাদ থেকে চৌমাথা হয়ে আমতলার মোড় পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এরপর রাত পৌনে ১২ টার দিকে মোটরসাইকেল মহড়ার পর আন্দোলনকারীরা নথুল্লাবাদ ও চৌমাথা এলাকা ছেড়ে যায়।

এদিকে আহতদের বিষয়ে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানানো না হলেও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিক, পুলিশ, শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ আহত ৩৯ জন ভর্তি হয়েছেন। রাতে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা হাসপাতালে যান।

অপরদিকে বিকেল ৪ টার দিকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে শান্তিপূর্ণ ভাবে রাত ১০ টায় তারা কর্মসূচি শেষ করলে ওই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ কর্মসূচির মাঝেই শিক্ষার্থীরা গায়েবানা জানাজার নামাজ আদায় করেন এবং কফিন নিয়ে মিছিল করেন। সেইসঙ্গে রাতে কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদ বেদিও তৈরি করেন তারা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার কথা থাকলেও, অনেক শিক্ষার্থী রাতেই হলেই রয়েছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম জানিয়েছেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে অনেকেই হল ত্যাগ করতে পারেননি, তবে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে হল ত্যাগ করবেন। যদিও হল ত্যাগের ঘোষণা আসার পর একদল শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদে শেরে বাংলা হলের সামনে প্রতিবাদ মিছিলও করে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।