ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

সহিংসতায় বিএনপি-জামায়াত, জানমাল রক্ষার জন্যই কারফিউ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৪
সহিংসতায় বিএনপি-জামায়াত, জানমাল রক্ষার জন্যই কারফিউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

ঢাকা: বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ব্যবসায়ীসহ দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জামায়াত-শিবির তো জঙ্গি সংগঠন। আর বিএনপির চেহারা স্পষ্ট হয়েছে।

ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে এরাই সহিংসতা করেছে। এদের এত সহজে ছাড় দেওয়া হবে না।

গত বুধবার (২২ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতা এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরাও বক্তৃতা করেন।
ব্যবসায়ীরা বর্তমান পরিস্থিতি শক্ত হাতে মোকাবিলা করে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। এজন্য তারা সরকারপ্রধানের সঙ্গে থাকবেন বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।  

শেখ হাসিনা বলেন, নাশকতাকারীদের দমন করে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করব। যতগুলো আইকনিক স্থাপনা স্থাপন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিলাম, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সেগুলোতে হামলা করে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। সবাইকে বিবেচনা করতে হবে এসবের উদ্দেশ্যটা কী।  

তিনি বলেন, আমার ব্রাজিলে যাওয়ার কথা ছিল। সেটি বাতিল করে দিয়েছি। বলেছি, দেশের এ সংকটে আমি যেতে পারব না। আমাকে মানুষের পাশে থাকতে হবে। গুজব ছড়ানো হয়েছে- শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, শেখ হাসিনা নাই, শেখ হাসিনা চলে গেছে। তাদের উদ্দেশে বলছি, শেখ হাসিনা পালায় না।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭৫ সালের পর ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি। জানি দেশে আমার কেউ নেই। তার পরও পরোয়া করিনি। আমি দেশে চলে এসেছিলাম। এরপর ২০০৭ সালে আমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দিয়েছে, ওয়ারেন্ট জারি করেছে, সমস্ত এয়ারলাইনসকে বলে দিয়েছে আমি যেন দেশে আসতে না পারি। আমি বলেছি, দেশে আমি ফিরবই এবং ফিরে এসেছি।  

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি, বাংলাদেশ আ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মনজুর, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন প্রমুখ।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের কথা ধৈর্য ধরে শুনেছি। যখন যে দাবি করেছে মেনে নিয়েছি। তার পরও যখন তারা সবকিছু বন্ধ করে দিল তখন ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়ল। ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো ঘটাল। ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন ধরে যে পরিকল্পনা করে এগিয়েছে সে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে। আমি জেলায় জেলায় খবর নিয়েছি কোথায় কোথায় শিবির নেতারা আছে। সব এখন ঢাকার আশপাশে ঘাপটি মেরে আছে। বিএনপি সবগুলোকে মদদ দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন এসবের পেছনে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা কারা সরবরাহ করছে।  

তিনি বলেন, বিএনপির আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। জঙ্গিবাদী দল জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে মিলে তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছে। বিএনপি এখনো হুকুম দিচ্ছে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য। অনবরত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। এ জঙ্গিদের দমন করে দেশে ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা আরও শক্ত অ্যাকশন নিয়ে সন্ত্রাসীদের দমন করে দেশের পরিবেশ অনুকূলে নিয়ে আসব।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেসব ভবন আমরা তৈরি করেছি, তার কোনোটিই বাদ পড়েনি। হামলা করা হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে। সকলকে বিবেচনা করে দেখতে হবে এসবের পেছনে উদ্দেশ্যটা কী। এগুলো শুধু কোটা আন্দোলনের জন্য হলো? ছাত্রদের তো আমরা বলেছি যে, হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের হয়ে আপিল বিভাগে আমরা মামলা করে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত তারা যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই কোর্ট রায় দিয়ে দিয়েছে। এর পরও এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কী উদ্দেশ্যে করা হলো? 

শেখ হাসিনা বলেন, যখন জ্বালাও-পোড়াও শুরু হলো তখন আন্দোলনকারী ছাত্ররা বলে দিল, এসবের সঙ্গে তারা জড়িত নয়। তারা এসব কিছু সমর্থন করে না। তাদের এ কথা শুনেই আমরা আর্মি মোতায়েন করেছি। এখন অনেকেই বলতে চেষ্টা করেছেন, ছাত্রদের বিরুদ্ধে নাকি আর্মি নামানো হয়েছে। আমি কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতি করে উঠে এসেছি। সেনাবাহিনী যে কী করতে পারে তা আমার জানা আছে। আমরা সব সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করি এসব সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে। তারপর আর্মি নামাতে আমরা বাধ্য হয়েছি। কারফিউ দিয়েছি। কারফিউর মধ্যেও বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস করার চেষ্টা করেছে। এরা কারা? খুব অপরিচিত কেউ না। আপনারা দেখেছেন এসবের সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। গ্রেনেড হামলা করে যে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল সেই দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এফবিআইয়ের লোক এসে এই তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। এই সাজাপ্রাপ্ত আসামির হুকুমে এসব জ্বালাও-পোড়াও করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী হামলা বিএনপি-জামায়াত একসঙ্গে করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০১৩-১৪-১৫ সালের সেই অগ্নিসন্ত্রাস কেউ ভুলে যায়নি। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ তখন নষ্ট করেছে। এবার ছেলেমেয়েরা কোটা চায় না তাই আমি বাতিল করে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধারা মামলা করেছে বলে সেটি পুনর্বহাল হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আমি বলেছি যে, কেউ হতাশ হবেন না। তার পরও তারা সারা বাংলাদেশ অচল করে রেখেছে। তার পরও তাদের কেউ কিছু বলেনি। যেহেতু বিষয়টি কোর্টে আছে এবং কোর্ট সময় দিয়েছেন তার মানে এর একটি যৌক্তিক সমাধান হবে। সরকারের পক্ষ থেকেই তো আপিল করেছি।  

তিনি বলেন, আদালত যে সময় দিয়েছেন সে পর্যন্ত তাদের ধৈর্য ধরা উচিত ছিল। ছাত্রদের কেউ বিরক্ত করেনি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বারবার কথা বলেছি, সান্ত্বনা দিয়েছি, বুঝিয়েছি। তার পরও আন্দোলন চলেছে। ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে। এরপর দেখলাম সেই অগ্নিসন্ত্রাস আবার। ব্যবসাবাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য, ডিজিটাল সিস্টেম পাওয়ার জন্য, সাধারণ মানুষের চলাফেরা ও জীবনযাত্রার মান আরও একটু উন্নত করার জন্য যে কটি স্থাপনা করা হয়েছিল সেগুলো অগ্নিসংযোগ করা হলো এবার।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসাবাণিজ্য যেন ভালোভাবে চলে সেজন্য যা যা করণীয় তার সবই আমরা করব। ব্যবসায়ীদের সমর্থন পেলে বিএনপি-জামায়াত-শিবির এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিতে পারব। ২০১৩-১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাস যারা করেছে তাদের অনেককেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে আবার তারা একই চেহারায় ফিরে গেছে। তবে এবার এত সহজে ছাড়া হবে না।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগুনসন্ত্রাসীরা ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে আর বলেছে, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ছাত্রদের বিরুদ্ধে। যখন ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে শুরু করেছে তখন আমি ছাত্রলীগকে বলেছি, বের হয়ে চলে আসতে। তারা চলে এসেছে। আর এ সুযোগে তাদের প্রত্যেকের রুম ভাঙচুর করে, জিনিসপত্র বাইরে ফেলে পুড়িয়ে দিয়েছে, মারধর করেছে। আমি বলেছি, কোনো কিছু কোরো না, ধৈর্য ধরো।  

তিনি বলেন, ২০০৭-০৮-এর বাংলাদেশের দিকে তাকান, ভেবে দেখুন তখন ব্যবসায়ীদের কী অবস্থা ছিল। কেউ ছিল জেলে আর কেউ ছিল বিতাড়িত। সে অবস্থা থেকে দেশটাকে আমরা ফিরিয়ে এনেছি। রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে আমরা একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে এসেছি। আজকে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, পণ্যের বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে, বিদেশে রপ্তানির জন্য বাজার উন্মুক্ত করা হয়েছে, ডিজিটাল সিস্টেমের ফলে ব্যবসাবাণিজ্য সহজ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার আসার আগে এসবের কিছুই ছিল না। এগুলো আমি করে দিয়েছি। যেসব স্থাপনার ফলে এগুলো সম্ভব হয়েছে সেই স্থাপনাগুলোতে আজ আঘাত করা হলো।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটিই লক্ষ্য ছিল যে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। যেসব ব্যবসায়ী বিদেশে যান তারা জানেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি কেমন ছিল। গত পনেরো বছরে বাংলাদেশের সেই ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বিদেশে গেলে এখন যে সম্মান লাভ করেন সেটি আগে ছিল না। দিনরাত পরিশ্রম করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খাত আমি উন্মুক্ত করেছি। সব থেকে বেশি সুযোগ দিয়েছি। কভিডের সময় সব থেকে বেশি সুযোগসুবিধা দিয়েছি। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের বেতনটাও আমরা দিয়েছি। ব্যবসাবাণিজ্য সচল রাখতে হবে বলেই আমি বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ডেকেছি। কারণ আমি জানি, ব্যবসায়ীদেরও সহযোগিতা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের ডেকেছি যাতে তাদের ভিতরে কোনো হতাশা না আসে। আমার দিক থেকে সবরকম সহযোগিতা তারা পাবেন। আগুনে পুড়ে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা সারিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আগুন যারা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবসায়ীদের কথা বলতে হবে।  

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। কভিডের সময়ও কিন্তু ব্যবসার ক্ষতি হয়েছিল। তখন আপনারা কোনো এক্সপোর্ট ইমপোর্ট করতে পারেননি। এমনকি ওই অবস্থায় কোনো কোনো দেশ অর্ডার ক্যানসেল করে দিচ্ছিল। ইউরোপে আমি নিজে কথা বলে, ইন্ডিয়াসহ অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাদের আমি বিরত করেছিলাম যেন এ রকম কোনো পদক্ষেপ তারা না নেয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে এবং রাজনীতি করার ফলে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে একটা ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠায় তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি আপনাদের ব্যবসা রক্ষা করতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, যখন আমার কাছে খবর এলো যে কয়েকটি গার্মেন্টসে আগুন দেওয়া হবে আমি সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা করেছি। আমি কিন্তু সবাইকেই চিনি তার পরও আমি যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসি তখন কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি এসব ভেদাভেদ করি না। কারণ আমি দেশটাকে ভালোবাসি। যারা আওয়ামী লীগ করে না, আওয়ামী লীগকে ভোটও দেয় না তারাও কিন্তু ভালোভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ব্যবসায় আমরা কখনো হাত দিইনি। ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিয়েছি, নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে দিয়েছি। সব রকম সুযোগ তাদের দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাতির পিতার কন্যা। আমি জনগণের ভোটে এসেছি। ব্যবসায়ীদের আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই এজন্য যে প্রত্যেকটি ভোটের আগে তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার চালানো হয়েছে, নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে তার পরও ব্যবসায়ীরা আমার পক্ষে তাদের সমর্থন বজায় রেখেছে।  

তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। এর আগে আর কখনোই এত দীর্ঘ সময় ছিল না। এর মধ্যেও ২০১৩-১৪-১৫ সালে অনেক বাধা মোকাবিলা করতে হয়েছে। বাংলাদেশের বাজেট ছিল মাত্র ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আর এখন আমরা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে পেরেছি। বেসরকারি বিনিয়োগকে আমরা হিসাবের মধ্যে নিয়ে এসেছি। যত রকম সহযোগিতা করা সম্ভব আমরা করে যাচ্ছি। বিদেশ থেকে যখন কেউ আসে, এসে দেখে যে বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষার ঝুলি না। বাংলাদেশ ভিক্ষা করে চলে না। বাংলাদেশও এখন অনেক উন্নত এবং এখানে বিনিয়োগ করা যায়। আমি ব্যবসার কেউ নই, ব্যবসা করিও না কিন্তু ব্যবসার জন্য যত রকম সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার তা করে দিই। কারণ ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারিত না হলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে না, মানুষের জীবনমান উন্নত হবে না।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি যখন দেখেছি মেট্রোরেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা ইন্টারনেট দেওয়ার আগে কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেনি। আজকে ইন্টারনেটের ডাটাবেস তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবল নষ্ট করা হয়েছে। সেগুলো এখন একে একে মেরামত করতে হচ্ছে। সরকার বসে নেই। এগুলো যত দ্রুত সম্ভব ঠিক করা যায় সে চেষ্টা করে চলেছে।  

তিনি বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষা করতে আমরা কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি। ১৯৮১ সালে আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন প্রতি রাতে কারফিউ ছিল। জিয়াউর রহমান যতদিন দেশ চালিয়েছে রোজই কারফিউ ছিল। আমরা শুনতাম রাত ১০টার মধ্যে বাসায় ফিরতে হবে, কারণ কারফিউ দেওয়া হয়েছে। সে কথা এখন অনেকেরই মনে নেই। আর যারা ইয়াং জেনারেশন তারা এসব জানেও না।  

সরকারপ্রধান বলেন, সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল জায়গা ছিল ছাত্রদের বিষয়টি। ছাত্রদের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে আমাকে বেশি দৃষ্টি দিতে হয়েছে। পুলিশসহ আমাদের সব লোকবল দিয়ে আমরা তাদের নিরাপত্তার চেষ্টা করেছি।  

শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা কিছুই না। আমি ক্ষমতার মুখাপেক্ষীও না। আমি ক্ষমতায় এসেছিলাম দেশটাকে উন্নত করতে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এটা আমাদেরই কষ্টের ফসল। আজকে সেই অর্জনকেই ধ্বংস করা হচ্ছে। যদি কেউ মনে করেন যে কারখানা খোলা যাবে তবে নিজ দায়িত্বে খুলে ফেলতে পারেন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তার দায়দায়িত্ব আমাদের নয়। ইন্টেলিজেন্সের খবর পাওয়ামাত্রই আমি শ্রমিক ও মালিকদের স্বার্থে কারখানা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি।  

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করতে। পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। কারফিউ কিছুটা শিথিল করেছি। জেলা শহরগুলোয় আমরা বলে দিয়েছি, যেসব জেলায় এখন তারা কোনো গোলমাল করতে পারছে না সেসব জেলার ডিসি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সেনাবাহিনী তারা একসঙ্গে বসে করণীয় নির্ধারণ করবে। কোথায় কত ঘণ্টা কারফিউ থাকবে আর থাকবে না সেটি নির্ধারণের দায়িত্ব তারা পালন করবেন। ঢাকায়ও আমরা একই ব্যবস্থা নিয়েছি। আস্তে আস্তে কারফিউ শিথিল করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।