ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দেশের আনাচ-কানাচ থেকে তাদের খুঁজে বের করুন: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৪
দেশের আনাচ-কানাচ থেকে তাদের খুঁজে বের করুন: প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

ঢাকা: ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দেশের আনাচ-কানাচ থেকে খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে রাজধানীর রামপুরায় সম্প্রতি হামলা ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শন শেষে তিনি এ আহ্বান জানান।

মেট্রোরেল, বিটিভিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে যেখানে আছেন, তাদের খুঁজে বের করুন, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে সে আহ্বান জানাই। ’

তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে বলব, ঢাকাবাসীকে বলব, যাদের জন্য আজ আপনাদের এ দুর্ভোগ, যারা ধ্বংস করল, যাদের জন্য আজ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, আমি তাদের বিচারের ভার এদেশের জনগণের ওপরই দিয়ে যাচ্ছি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এদেশের মানুষের রুটি-রুজির ওপর হাত দিয়েছে, রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের বিচার জনগণকেই করতে হবে। কারণ জনগণই এ দেশের একমাত্র শক্তি। ’

কেউ মিথ্যাচার চালিয়ে যেন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে কাউকে যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে। (সবাই) আসল সত্যটা জানুক। ’

বিটিভিতে হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকারে এসে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে বিটিভিতে বিভিন্ন উন্নয়ন করেছি, আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করেছি। কিন্তু আজ এত বছর পর এসে দেখা গেল, সেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যে নারকীয় তাণ্ডব, তারই যেন একটা বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ দেখছে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনো দেয়নি। কিন্তু আজ এ টেলিভিশন সেন্টারকে যারা এভাবে পোড়াল, একটা কিছু নেই যে রক্ষা পেয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি এদেশেরই মানুষ? এদের কি এ দেশেই জন্ম? একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এ আক্রমণ। ’

বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশটা আমরা অনেক কষ্ট করে স্বাধীন করেছি। আর আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সেই মর্যাদাটাকে ধ্বংস করার জন্যই এ ধ্বংসযজ্ঞ। ’

বিভিন্ন সময় বিটিভিতে আসার কথা স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ অতীতের কথা মনে পড়ে, আমি কতবার এখানে এসেছি। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এখানে ভাষণ দিতে এসেছি। নানা অনুষ্ঠানে এসেছি। আজ যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম এরপর এটা আবার কবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে, জানি না। ’

এ সময় অত্যন্ত আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো দেখে আমি আসলে আর কথা বলতে পারছি না। একেকটা জিনিস যখন গড়ে তোলা হয়, অনেক কষ্ট করেই করতে হয়। ’

তিনি বলেন, ‘দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি। সেটা তো আমার দেশের মানুষেরই জন্য। একটা জিনিস এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি, যাতে শুধু দেশে নয় বিদেশিদের কাছেও দৃষ্টিনন্দন হয়। ’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা দেশের যে উন্নতি করছি, তার সিম্বল হিসেবে ব্যবহার হবে, সে জায়গাগুলো একে একে ধ্বংস করা হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে। এত দিনের এত কষ্টের ফসল সব শেষ করে দিতে চাচ্ছে। এটাই সবচেয়ে বড় কষ্টের। দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই, আমি তাদের সহযোগিতা চাই। ’

ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী

এর আগে প্রধানমন্ত্রী হামলা ও অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন পরিদর্শন করেন।

সকাল সোয়া ৯টায় রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে যান প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী একে একে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভির সব শাখা ঘুরে দেখেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী হতাশ এবং আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়। এ সময় বাংলাদেশ টেলিভিশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখও অশ্রুসজল হতে দেখা যায়।

বিটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিটিভির ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় একটি ভিডিও ক্লিপ উপস্থাপন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সান্ত্বনা দেন।

গত ১৮ জুলাই দুপুরের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কারের দাবিতে দেওয়া ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে রাতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৪
এমইউএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।