ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে কোরআনের হাফেজ হবে

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৪
বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে কোরআনের হাফেজ হবে

মানিকগঞ্জ: সম্প্রতি কোটা আন্দোলনের ঢাকা জেলার সাভারে পুলিশের ছোড়া গুলিতে সাদ মাহমুদ খান ( ১৩) নামে এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে । ছেলেকে কোরআনের হাফেজ হিসেবে তৈরি করার ইচ্ছে ছিল-কথাগুলো বলছিলেন বাবা বাহাদুর খান।

গত শনিবার (২০ জুলাই) বিকেলের দিকে সাভার নিউ মার্কেটের সামনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে সাদ মাহমুদ খান মারা যায় বলে তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাবা বাহাদুর খান।

নিহত সাদ মাহমুদ খান মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম খান পাড়া এলাকার বাহাদুর খানের ছেলে। সাদ মাহমুদ খান জাবাল -ই-নূর দাখিল মাদরাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র এবং দুই পারা কোরআনের হাফেজ।

জানা যায়, পারিবারিক জীবনের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দীর্ঘ সময় ছিলেন বাহাদুর খান । প্রবাস জীবনের আগে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। দুই বছর হয় বাহাদুর খান দেশে এসেছেন। বাহাদুর দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক। বড় মেয়ে তাসলিমা খানম নাজনীন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসিতে পড়ালেখা করেন, দ্বিতীয় সন্তান সাদ মাহমুদ খান সাভারের জাবাল-ই-নূর দাখিল মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো এবং সবার ছোট কন্যা সন্তান ওই একই মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে । সন্তানদের লেখা-পড়া যাতে ভালোভাবে করাতে পারে সেই জন্য সাভারের ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন সপরিবারে বাহাদুর। বাহাদুর ও তার স্ত্রীর একটি স্বপ্ন ছিল তারা মারা গেলে যেন হাফেজ হয়ে সাদ মাহমুদ খান তাদের জানাজার নামাজ পড়াতে পারেন।

নিহতের বাবা বলেন, সন্তানদের লেখা পড়ার কারণেই সপরিবারে ঢাকার সাভারে বসবাস করছি, আমার ছেলে বিকেলের দিকে বাসার ছাদে খেলা করছিল। ছাদে খেলা করার সময় ধোয়া দেখতে পায়, সেই ধোয়া দেখার জন্য বের হয়ে সাভার নিউ মার্কেটের দিকে রওনা হয়। লোকমুখে শুনেছি পথিমধ্যে পুলিশের ছোড়া গুলিতে সাদ রাস্তায় পড়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে ( সাদ মাহমুদ খান ) উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়। আমার এ ছোট্ট শিশু সন্তান-তো কোনো রাজনীতি করতো না , কেন তার এভাবে মৃত্যু হলো।

সাদ মাহমুদ খানের বড় বোন তাসলিমা খানম নাজনীন বলেন, আমার ছোট্ট ভাইয়ের কি-দোষ ছিল তাকে এভাবে গুলি করে মারতে হলো। সাদের যখন গুলি লাগে তখনও ( সাদ মাহমুদ খান ) রাস্তায় পড়ে যায়, পুলিশের ভয়ে কেউ একটু এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। পুলিশ চলে গেলে স্থানীয়রা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটতে থাকে, অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণেই আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। আমি সরকারের কাছে এর সঠিক বিচার চাই।

জেলার সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, শুনেছি সম্প্রতি কোটা আন্দোলনকারী আন্দোলনের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সাভারে সাদ মাহমুদ খান নামের ১৩ বছর বয়সী শিশুর পায়ে গুলি লাগে এবং সে মারাও যায় । প্রত্যেকটি হত্যাই অন্ত্যন্ত দুঃখজনক। পরের দিন ( ২১ জুলাই ) সকাল ৯টার দিকে ধল্লা হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে ধল্লা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।