ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ ভাদ্র ১৪৩১, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ভালো থাকতে ঢাকায় গেছিলাম, এখন তো সব শ্যাষ!’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
‘ভালো থাকতে ঢাকায় গেছিলাম, এখন তো সব শ্যাষ!’

বরিশাল: অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে গিয়ে আর ঘরে ফিরে আসা হয়নি নিরাপত্তাকর্মী ইমরান খলিফার। তবে লাশ হয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন তিনি, সপ্তাহ পার হলেও শোকের মাতম থামছে না স্ত্রীসহ স্বজনদের।

একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবারটি।

জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানী ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নিরাপত্তাকর্মী বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের কালনা গ্রামের সন্তান ইমরান খলিফা (৩৩)। তিনি গুলশান-২-এর চারুলতা নামের একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।

ইমরানের বাবা নজরুল খলিফা জানান, শুক্রবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইমরানের ফোন থেকে একটি কল আসে। যেখানে চিকিৎসক পরিচয়ে একজন জানান, ইমরান খুবই অসুস্থ, ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে।

নজরুল খলিফা আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ছেলের বউকে জানাই। সে হাসপাতালে গিয়ে দেখে, আমার বাবার নিথর মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। পরে বউমা আমাকে জানিয়েছে বাবার (ইমরানের) গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা ইমরানের মা সেলিনা বেগম। মৃত্যুর ৮ দিন পার হলেও কিছুক্ষণ পরপর ছুটে যান ছেলের কবরের কাছে। আর আহাজারি করেন ২৩ মাস বয়সী নাতি ইয়াছ খলিফাকে বুকে ধরে।

স্বজনরা জানান, চলতি মাসের ৩ তারিখ ঢাকার গুলশানের একটি প্রতিষ্ঠানে ১৩ হাজার টাকা বেতনে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি নেন ইমরান খলিফা। গত ১৯ জুলাই অফিসে সকাল ৮টায় ডিউটি থাকলেও স্ত্রী অসুস্থ থাকায় সময় পরিবর্তন করে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ডিউটি নেন তিনি। দুপুরে অফিস থেকে জানানো হয় রাস্তায় সহিংসতা চলছে। পরিস্থিতি ভালো না হলে অফিসে আসার দরকার নেই। তবে বিকেলে অসুস্থ স্ত্রীর জন্য বাধ্য হয়ে ওষুধ কিনতে রাস্তায় বের হন ইমরান। সন্ধ্যায় শাহজাদপুর বাজারে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

ইমরানের স্ত্রী শান্তা জানান, ৩ বছর প্রেম করে ২০২০ সালে বিয়ে করেন তারা। গত বছর নভেম্বর মাসে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় পাড়ি জমান তারা। সবশেষ সন্তানকে নিয়ে শাহজাদপুর খিল বাড়িটেক নামক স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। আর প্রথমদিকে মুদির দোকান ও পরে ফুটপাতে জুতার দোকান দিয়েও ব্যবসা করতে না পেরে সবশেষ চাকরি নিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছিলেন ইমরান। তবে হঠাৎ ইমরানের মৃত্যু ভেঙে দিয়েছে তাদের সব স্বপ্ন।

ঘটনার দিনের বিবরণে শান্তা বলেন, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ইমরান অফিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাতের খাবার প্রস্তুত করতে বলে। এরপর আমার জন্য ওষুধ কিনে আনতে এবং বাইরের পরিস্থিতি দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তবে সে আর ঘরে ফিরে আসেনি। হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যমে যেটুকু জেনেছি, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শাহজাদপুর বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ইমরান।

তিনি বলেন, আমরা তো প্যাটের তাগিদে ঢাকা গেছি, রাজনীতি বুঝি না। সন্তানরে নিয়া ভালো থাকার তাগিদে ঢাকায় গেছিলাম আমরা, এখন তো সব শ্যাষ! ইমরানের অফিসের স্যারেরা ফোন দিয়া আমাগো খোঁজ নিছে, কইছে পরিস্থিতি ভালো হইলে ঢাকায় যাইতে। কিন্তু যাইয়া কী করমু, সান্ত্বনা ছাড়া কেউ কি আমার ভালোবাসার মানুষটারে ফিরাইয়া দিতে পারবে? আমি এই হত্যার বিচার চাই।

প্রতিবেশীরা জানান, ইমরান খলিফা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের কালনা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য নজরুল খলিফার ছেলে। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ইমরান সবার বড়। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে কখনও জড়িত ছিলেন না। তাই সরকার যেন ইমরানের পরিবারের পাশে দাঁড়ায় সেই দাবি তোলেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।