ফরিদপুর: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ফরিদপুরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই সাংবাদিক, আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষে ফরিদপুর শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এর আগে জেলা শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল থেকেই ওই এলাকায় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অবস্থান নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকাল ১১টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন ক্যাম্পাসে। এ সময় সেখানে আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা একাত্মতা প্রকাশ করে সমবেত হন। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে যাওয়া চেষ্টা করে। এ সময় গোয়ালচামট মডেল মসজিদের সামনে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
এ সময় পুলিশ প্রথমে আন্দোলনকারীদের থামানোর চেষ্টা করে। এরপরই সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে আন্দোলনকারীদের দিকে। এক পর্যায়ে সেখানে রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় গিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা মেডিকেল কলেজ এলাকায় ঢুকে পড়ে। সেখানেও তাদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করলে পুলিশও পাল্টা টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে। উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষোভকারীরা সেখান থেকে সরে যায়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা নিরস্ত্র ছিলেন। স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে সামনে এগোনোর সময় প্রথমে আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা করে। এ সময় তারা রাস্তার পাশে ইট-খোয়া দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করেন। পরে তারা পালিয়ে গেলে ভাঙ্গা রাস্তার মোড় থেকে পুলিশ তাদের দিকে প্রথমে টিয়ার শেল এবং পরে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে এতে সঞ্জয় ও রনি নামে দুজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এছাড়া ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে দৈনিক আজকের পত্রিকার ফরিদপুর প্রতিনিধি শ্রাবণ হাসান ও দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকার জাকিব আহমেদ জ্যাক নামের দুই সাংবাদিকও আহত হন।
এ বিষয়ে আহত আন্দোলনকারী আহাদুজ্জামান রনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মিছিলটি ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে অবস্থান করতে চাইলে, পুলিশ ও ছাত্রলীগ আমাদের ওপরে গুলি এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমরা অনেকেই আহত হই। এখন পর্যন্ত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ’
এদিকে এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরেক সঞ্জয় বৈরাগী নামে এক নার্সিং শিক্ষার্থী। বর্তমানে ফরিদপুর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীরে ১৮টি রাবার বুলেটের আঘাত রয়েছে বলে কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স আফসানা আফরোজ জানিয়েছেন।
আহত এই শিক্ষার্থী বলেন, আমি বিক্ষোভে গিয়েছিলাম। মিছিলটি ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ের দিকে গেলে পুলিশের পাশ থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। এরপরই পুলিশ মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে শুরু করে। আমার শরীরে ১৮টি রাবার বুলেটের আঘাত রয়েছে।
এদিকে আন্দোলনকারীদের দিকে টিয়ার শেল ছুড়তে গিয়ে এক নারী পুলিশ নিজেই আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
এসব ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, কয়েকজন আহত হয়েছে শুনেছি। আর কত রাউন্ড গুলি বা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে তা এখনই বলতে পারছি না। পরে জানাতে পারব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০২৪
এসআরএস