লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার দক্ষিণ চরমার্টিন এলাকায় মেঘনা নদীর উপকূলীয় বাসিন্দা তাছনুর বেগম। তার বাড়িটি নদীর খুব কাছেই।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরের দিকে মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে উপকূলীয় এলাকায়। এতে তলিয়ে যায় লোকালয়ের বসতবাড়িসহ ফসলি জমি।
এর আগে সোমবার একই সময়ে জোয়ারে পানি বাড়িতে উঠে। রাতেও একবার পানিতে প্লাবিত হয় তাদের এলাকা। প্রতিদিন দিনে-রাতে দুইবার জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব মতে, নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় এক মিটার পানির উচ্চতা বেড়েছে। পূর্ণিমার প্রভাবে নদী উত্তাল থাকায় আরও অন্তত তিনদিন এমন পরিস্থিতির থাকতে পারে।
তাছনুর বেগম বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বর্ষা মৌসুমের এ সময়টাতে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাদের যুদ্ধ করতে হয়। পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার সময়ে নদীতে যখন পানির উচ্চতা বাড়ে, তখন পানিতে তলিয়ে যায় তাদের বাড়ি। এসময় পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটে তাদের। রান্নাঘরের চুলাতে পানি উঠে যায়। ফলে প্রতিদিনের খাবার তৈরিতে তাদের সমস্যা হয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা গ্যাসের সিলিন্ডারের মাধ্যমে রান্না করে।
তিনি আরও জানান, জোয়ার-ভাটার কারণে বাড়িতে গবাদিপশু কিংবা হাঁস পালন করতে পারি না। জোয়ারের পানি নামার সময় পানির সঙ্গে হাঁসগুলো হারিয়ে যায়। তাই হাঁস-মুরগি পালন করা বন্ধ করে দেন তিনি।
তাছনুর বেগমের স্বামী মো. মোস্তফা বলেন, জোয়ারের পানি নামার সময় ঘরের ভিটা ভেঙে দিয়ে যায়। তখন বসতঘর ঝুঁকিতে পড়ে। বার বার মেরামত করেও কাজ হয় না। যতবার জোয়ারের পানি উঠবে, ততবারই এমন পরিস্থিতি হয়।
তাছনুরদের বাড়ির আরেক বাসিন্দা ইয়াছমিন বেগম। তার দুই সন্তান লেখাপড়া করে মাদরাসায়। জোয়ারের পানির কারণে ঝুঁকি বিবেচনায় তিনি ঠিকমতো তার সন্তানদের মাদরাসায় পাঠাতে পারেন না।
একই বাড়ির গৃহবধূ রুবিনা বেগম দুশ্চিন্তায় থাকেন তার কোলের শিশুকে নিয়ে। গত মাসে পূর্ণিমার জোয়ারে যখন পানি উঠে, ওই সময় পানি তাদের ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি ছিল তাদের ঘরে। এমতাবস্থায় শিশুকে নিয়ে ঝুঁকিতে ছিলেন তিনি। রুবিনা বেগম বলেন, যখন ঘরে পানি উঠে তখন শিশুকে নিয়ে খুব ভয়ে থাকি।
একই এলাকার আয়েশা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। বাংলানিউজকে এ নারী বলেন, জোয়ারের পানি বাড়ি-ঘরে উঠে গেছে। চুলোয় পানি ঢুকে পড়েছে। গত কয়েকদিন থেকে রান্না করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এলাকার কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের খবর নেয় না। শুধু ভোটের সময় ভোট চাইতে আসে। দুর্যোগের সময় কাউকে কাছে পাই না।
স্থানীয় একটি মাদরাসার তৃতীয় জামাতের শিশু শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম, আরিফ হোসেন ও দ্বিতীয় জামাতের শিক্ষার্থী মো. হাবিব বলেন, জোয়ারের পানি আমাদের বাড়িঘরে উঠে যায়। এতে আমাদের চলাফেরায় কষ্ট হচ্ছে। পানি পার হয়ে নিয়মিত মাদরাসায়ও যেতে পারছি না।
নাছিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ বশির উল্যা ও অটোরিকশা চালক মনির হোসেন বলেন, মেঘনার তীরবর্তী বেড়িবাঁধ না থাকায় আমরা অরক্ষিত। ফলে জোয়ারের পানি বাড়লে লোকালয় তলিয়ে যায়। বাঁধের কাজ শুরু হলেও ধীরগতিতে চলছে। কিন্তু এরই মধ্যে জোয়ারের তোড়ে উপকূল জুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
তারা জানান, পানি তোড়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে জোয়ারের পানি ঢুকলে নামার পথ না থাকায় জমে থাকে পানি। পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কালভার্ট নেই। জনপ্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আমরা জোয়ারের পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। তাই দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে জোয়ারের পানির কবল থেকে উপকূল রক্ষা পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৪
এসএম