ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মায় ভাঙন, ঘুম নেই নদীপাড়ের বাসিন্দাদের

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪
পদ্মায় ভাঙন, ঘুম নেই নদীপাড়ের বাসিন্দাদের

রাজবাড়ী: পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে রাজবাড়ী জেলার নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদীর পাড়ের কয়েক হাজার পরিবার।

ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার মুখে শত শত দোকানপাট ও একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

পদ্মায় তীব্র ভাঙনে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের পন্টুন সাময়িক বন্ধ রয়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পদ্মা পাড়ের মানুষ।

ভাদ্র-আশ্বিন মাসে পদ্মা নদীর ভাঙন বেশি দেখা যায়। গত এক সপ্তাহ ধরে ভাঙনের শিকার হয়েছে জেলার দৌলতদিয়া ৪ নম্বর ফেরিঘাটসহ আশপাশের এলাকা। আর ভাঙনের মাত্রা অতি তীব্র হওয়ায় ঘাটের ৪ নম্বর পন্টুনে ফেরি ভিড়তে পারছে না।

ভাঙনের মাত্রা তীব্র হলেও ঘাট রক্ষার্থে তেমন প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ)। অতি ভাঙনে বিআইডব্লিউটিএ’র গাফিলতির কথাও বলছেন অনেকে। আর এ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের হাজারও মানুষ। তবে নদী ভাঙনে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদী তীরবর্তী বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা।

দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশপথ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার যানবাহন ও অর্ধলক্ষাধিক মানুষ নদী পারাপার হয়। ঘাটে সর্বমোট সাতটি ফেরিঘাটের পন্টুন রয়েছে। সাতটির মধ্যে সচল ছিল ৩টি পন্টুন।

৭, ৩ ও ৪ নম্বর এই তিনটি ফেরিঘাট দিয়েই যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হতো। কিন্তু চারদিন ধরে ৪ নম্বর ফেরিঘাটটি পদ্মার ভাঙনে বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা।

স্থানীয় চায়ের দোকানদার মনির ফকির বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শুনি, ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। হঠাৎ এভাবে ঘাট ভেঙে যাওয়ার কথা শুনে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। ঘাট থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে আমার চায়ের দোকান। এর অদূরে নিজেদের বসতবাড়ি।  এভাবে ভাঙতে থাকলে দোকান-বাড়িঘর কিছুই রক্ষা করতে পারব না।

শাহাদৎ মেম্বার পাড়ার হোসেন ফকির, নুরু শেখসহ কয়েকজন বলেন, কয়েকদিন ধরে পদ্মার পানি অনেক কমতে থাকায় চাপ বেড়েছে। যে কারণে নদীর ভাঙন ঠেকাতে পাড়ে ফেলা বালুভর্তি বিশেষ জিও ব্যাগ ধসে পড়তে শুরু করেছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না হলে ঘাটসহ স্থানীয় বাড়িঘর রক্ষা করা সম্ভব না।

জাকির হোসেন নামের বাসিন্দা বলেন, গত সপ্তাহ থেকে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। কারও কোনো নজর নেই। কখন যে নদী ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়, সে ভয়ে আছি। ভয়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছি না।

জব্বার মুন্সি নামে এক বাসিন্দা বলেন, আমরা ভাঙন আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারছি না। সন্তানদের নিয়ে সারা রাত জেগে থাকি। কারণ কখন যে আমাদের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়।

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, নদীর ভাঙন থেকে ঘাট রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে ২৪০ বস্তা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ঘাটটি রক্ষা করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ কাজ করছে। এ কাজ চলমান থাকবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া অংশে প্রায়ই ভাঙন দেখা দেয়। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বিআইডব্লিউটিএ দুটি কর্তৃপক্ষ যেহেতু নদীভাঙন নিয়ে কাজ করে এবং নদী শাসনের কাজ তারা করে থাকে। এখানে ঘাট এলাকা হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএ এ কাজটি করবে। নদীর পানি কিছুটা কমে যাওয়ার কারণে এখানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনে ৪ নম্বর ফেরিঘাটটি বন্ধ থাকায় অতিদ্রুত চালুর জন্য কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ। যানবাহন পারাপারে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য দ্রুতই ঘাটটি চালুর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ভাঙন এলাকার মধ্যে ফেরির পন্টুন চালু রাখতে পারি না। মানুষের জান-মালের কথা ভেবে পন্টুনটি বন্ধ করে রেখেছি। এ কারণে এখানে আমরা কাজ শুরু করেছি। স্থায়ীভাবে ঘাট রক্ষার ব্যাপারে আমাদের প্রজেক্টের কাজও চলমান আছে। ঘাট এরিয়ায় যদি কোনো ভাঙন থাকে, আমাদের স্বল্প পরিসরে কাজ করার ব্যবস্থা আছে। অতি দ্রুতই ৪ নম্বর ফেরিঘাটের কাজটি শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০২০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।