শেরপুর: টানা বৃষ্টি না থাকায় শেরপুরে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে এখনও পানিবন্দি রয়েছেন প্রায় ৫০ গ্রামের মানুষ।
পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, গত চার দিনে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন- নালিতাবাড়ী উপজেলার খলিশাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী (৬৬), অভয়পুর গ্রামের দুই ভাই হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৬), বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের গৃহবধূ অমিজা খাতুন (৪৫), বাতকুচি গ্রামের বৃদ্ধা জহুরা খাতুন(৭০)।
নালিতাবাড়ীতে নানা বাড়ি বেড়াতে এসে শেরপুরের ধলা ইউনিয়নের চান্দেরনগর কড়ইতলা গ্রামের জামানের ৮ বছর বয়সী কন্যাশিশু জিমি আক্তার। নকলা উপজেলার জালালপুর চিকনা এলাকার উজ্জ্বল মিয়া (৫০), গণপদ্দি গজারিয়া এলাকায় আব্দুর রাজ্জাক (৬০) ও নকলা উপজেলার টালকি ইউনিয়নের বড়পাগলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের পাঁচ বছর বয়সী ছেলে রাহিম মারা যায়। এছাড়া ঝিনাইগাতিতে বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে এক অজ্ঞাত নারীর মরদেহ।
নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, গত রোববার পর্যন্ত নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন ও বেসরকারিভাবে মোট ১৯ হাজার ৬০০ মানুষের মাঝে শুকনো খাবারের প্যাকেট ও ছয় হাজার রান্না করা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে। শুকনো খাবার এর মধ্যে রয়েছে- এক কেজি মুড়ি, এক কেজি চিড়া, আধাকেজি গুড়, এক লিটার পানি। এছাড়াও একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
নালিতাবাড়ীতে বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪৬টি। এখনও পর্যন্ত এ আশ্রয়কেন্দ্র ১৭০ জন অবস্থান করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ হাজার মানুষ। ৪৫০ ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ ৪৬৮০টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ১৮৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অপরদিকে নকলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ হাজার মানুষ, ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে ১১০ জন এখনও অবস্থান করছেন। গতকাল পর্যন্ত এ উপজেলায় এক হাজার ১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আংশিক ২৫টি, সম্পূর্ণ ১২টি মাটির ঘর।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পৌনে দুই লাখ কৃষকের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে এবারের বন্যায়। বন্যায় শেরপুরে ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। তিন হাজার মাছের ঘের ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। বন্যার কারণে জেলার ২৪২টি প্রাথমিক ও ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলাতে পানি কমলেও, এখনও ঘরে পানি রয়েছে নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ভাটি অঞ্চলে। স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বিভিন্ন দপ্তর। তবে সব জায়গায় নৌকা না থাকায়, ত্রাণ সরবরাহে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পানি বন্দী অনেক মানুষ এখনও ত্রাণ পাচ্ছেন না।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাকিবুজ্জামান খান বলেন, জেলার ভোগাই, চেল্লাখালী, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে শেরপুরে বানবাসী মানুষের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) তিন হাজার ৫০০ মানুষের মাঝে শুকনো রেশন ও রান্না করা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, শেরপুর অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. কর্নেল হাসান হাফিজুল হক, ক্যাপ্টেন নাহিয়ান ও মেজর তাওসীফ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৪
এসএম