ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দুই ইউনিয়নের আকচা ও চিলারং এ অবস্থিত শুক নদীর বুড়ির বাঁধে চলছে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা।
শীতের শুরুতে বুড়ির বাঁধের মাছ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বুড়ির বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়। পরে পানি কমলে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) থেকে মাছ ধরতে নামেন কয়েক গ্রামের শত শত জেলেসহ সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাছ ধরার জন্য গ্রাম ও শহরের শত শত মানুষ আকচা ও চিলারং এ অবস্থিত শুক নদীর বুড়ির বাঁধে আসেন। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বৃদ্ধরাও রয়েছেন এ দলে। সবাই জাল, পলো, খোচা ও লাফিজাল নিয়ে নেমে পড়েছেন।
এছাড়া যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও হাত দিয়ে মাছ ধরতে নেমে গেছেন কাঁদার মধ্যে। সব মিলিয়ে এখানে এখন চলছে মাছ ধরার ধুম।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮২ সালে শুকনো মৌসুমে এই এলাকার জমি চাষাবাদের জন্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আচকা ও চিলারং ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকায় শুক নদীর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানি আটকে রাখা হয় ওই এলাকার উঁচু জমি চাষাবাদ করার জন্য। আটকে রাখা পানিতে প্রতি বছরে ঠাকুরগাঁও মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন মাছের পোনা অবমুক্ত করে। আর শীতের শুরুতেই বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর চলে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব।
মাছ শিকারিরা ফিকা জাল, লাফি জাল, কারেন্ট জাল, চটকা জালসহ বিভিন্ন মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে বুড়ির বাঁধে আসেন মাছ শিকার করার জন্য।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২২ নম্বর সেনুয়া ইউনিয়ন থেকে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার জন্য এ দিনটির অপেক্ষা থাকি। সোমবার বিকেলে গেট খুলে দেওয়া হয়েছে কিন্তু পানি বেশি থাকায় আজ থেকে মাছ মারা শুরু হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী থেকে মাছ ধরতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, মাছ ধরার জন্য আমরা কয়েকজন ভোরে এসেছি। বুড়ির বাঁধে মাছ ধরতে এসে মনে হচ্ছে, যেন এক মিলনমেলা, যেদিকে তাকাই শুধু মানুষ আর মানুষ। কিন্তু মাছ মারতে এসেছি কিন্তু মাছ পাওয়া যাচ্ছে না কারণ স্থানীয় লোকজন চতুর্দিকে রিং জাল ও কারেন্ট জাল বসিয়ে মাছগুলোকে আটকে রাখে। এভাবে তারা যার যেটি জায়গা সেই জায়গাগুলো দখল করে রাখেন পরে পানি কমলে তারা মাছগুলো মারেন।
এদিকে শহরের চাইতে এখানকার মাছের দাম বেশি বলে জানালেন ক্রেতারা।
রুহিয়া থেকে মাছ কিনতে আসা মামুন বলেন, এখানে টেংরা, গোচি, শিং, টুনা মাছ প্রতি কেজি ১০০০-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর শোল ও রুই কাতল মাছ চাওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬শ টাকা। প্রতি কেজি পুঁটি মাছ ৩০০-৪০০ টাকা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সারোয়ার চৌধুরী জানান, বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার পর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় বুড়ির বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়। এতে উজানের পানি কমে যায়। আর শীতের শুরুতেই বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর চলে বুড়ির বাঁধে শত শত মানুষের মিলনমেলা ও মাছ ধরার উৎসব।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
আরএ