ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে ইডেনের ভাইস প্রিন্সিপালের বাসায় ঢুকে লুট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে ইডেনের ভাইস প্রিন্সিপালের বাসায় ঢুকে লুট

ঢাকা: উত্তরায় ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের ভুয়া পরিচয়ে বাসায় ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুটের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কারের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের শাহ মখদুম এভিনিউ রোডের বাসার মালিক হারুনুর রশিদ হাওলাদার ও মমতাজ শাহানারা।  মমতাজ শাহানারা ইডেন মহিলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল (উপাধ্যক্ষ)।  গত শুক্রবার এক একদল দুষ্কৃতকারী সমন্বয়কের ভুয়া পরিচয়ে তাদের বাসায় ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে।

অবৈধ অস্ত্র ও টাকা মজুত আছে, এমন অভিযোগ তুলে তারা চাঁদা দাবি করে ২৫ লাখ টাকা। মমতাজ শাহানারা সেই চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা লুট করে নিয়ে যায় ৮৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ১৫ লাখ টাকা।

পরে মঙ্গলবার ভোর রাতে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের হোটেল প্যারাডাইজ থেকে একজন এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার বিকেলে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন- মো. মারুফ হাসান পল্লব (৩২) ও আব্দুল্লাহ আল মামুন সজিব (২৬)। লুট হওয়া ১৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ এক লাখ টাকা, একটি পাসপোর্ট ও ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।

এর আগে রোববার অজ্ঞাতনামা ৯-১০ জনকে আসামি করে উত্তরা-পশ্চিম থানায় মামলা করেন মমতাজ শাহানারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন  ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

উত্তরা-পশ্চিম থানার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অজ্ঞাতনামা ৯-১০ জন দুষ্কৃতকারী ওই বাসার ম্যানেজারকে জিম্মি করে ষষ্ঠতলায় হারুনুর রশিদ হাওলাদারের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। এ সময় তারা নিজেদের বিজিএমইএ ও শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির ছাত্র এবং ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দেয়।  

দুষ্কৃতকারীরা ফ্ল্যাটে প্রবেশ করার পর সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর খুলে ফেলে এবং হারুনুর রশিদ হাওলাদারের স্ত্রী মমতাজ শাহানারাকে বলে, তাদের ফ্ল্যাটে অবৈধ অস্ত্র ও টাকা মজুত আছে।  

তারা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মমতাজ শাহানারার কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করে। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুষ্কৃতকারীদের মধ্যে কয়েকজন তার সাথে কথা বলতে থাকে। বাকিরা এ সময়ে শোয়ার ঘর থেকে ৮৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ১৫ লাখ টাকা লুট করে নেয়।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, দুষ্কৃতকারীরা স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা লুট করে রাত ২টা ৪০ মিনিটের দিকে চলে যায়। যাওয়ার সময় তারা সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআরও সঙ্গে নিয়ে যায়। পরে রোববার মমতাজ শাহানারা বাদী হয়ে মামলা করেন।

উত্তরা-পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, মামলা দায়ের হওয়ার পর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। এরপর তাদের গ্রেপ্তার এবং লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে।  

অভিযানে গত মঙ্গলবার ভোর রাতে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের হোটেল প্যারাডাইজ থেকে ঘটনায় জড়িত মো. মারুফ হাসান পল্লবকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, একটি পাসপোর্ট এবং এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

পরে বুধবার পল্লবকে আদালতে পাঠালে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং অন্য অভিযুক্তদের বিষয়ে তথ্য দেন। পরে মারুফ হাসান পল্লবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার বিকেলে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন সজিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় সময় তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজিবও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলে জানান ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তার এবং লুণ্ঠিত বাকি স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
এসসি/আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।