ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট, ১৪ মাস পর মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২৪
ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট, ১৪ মাস পর মামলা

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়ি ও খামার ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনায় দীর্ঘ ১৪ মাস পরে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ মণ্ডল বাদী হয়ে গত ২ নভেম্বর একজন সাংবাদিকসহ ৫৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।  

মামলায় ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে গত ২০২৩ সালের ৬, ৮ ও ১২ সেপ্টেম্বর তিন দফায় অভিযুক্তরা বাদীর বাড়ি, খামার ও মাছের প্রজেক্টে হামলা ও লুটপাট করে।

এ মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন হলেন, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, আওয়ামী লীগ সমর্থক ওই ইউনিয়নের চিনিপাড়া গ্রামের রতন মিয়া ও মোস্তফি শ্রমিক লীগের কর্মী মমিদুল ইসলাম।  

মামলায় উল্লেখ করা হয়, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদে সরকারিভাবে বরাদ্দ আসা ভিজিএফ টিআর কাবিখা প্রকল্পের ৪০ শতাংশ ভাগ দাবি করে ইউনিয়ন পরিষদে লোকজন পাঠাতেন জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লব। সরকারি বরাদ্দের অংশের ভাগ না পেয়ে বিপ্লবসহ আওয়ামী লীগের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের পরিকল্পনা করেন। বিপ্লবের হুকুমে অভিযুক্তরা গত ২৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ মণ্ডলের বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা বেগমকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এরপর বাড়িতে লুটপাট করে দুটি পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যায়। এতে নগদ ১৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ২৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার মালপত্র নিয়ে যায় অভিযুক্তরা।  

পরে লুটপাট হওয়া মালামাল ফেরত দেওয়ার দাবিতে পুনরায় চাঁদা দাবি করেন। এতে রাজি না হলে এর দুই দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর রাতে পুনরায় চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডলের মাহি পোল্ট্রি ফার্মে হামলা চালিয়ে পাঁচ হাজার মুরগিসহ প্রায় ৫০ লাখ ৩০ হাজার টাকার পণ্য লুট করে। এতেও থেমে থাকেনি লুটপাট। এর চার দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের দুই একর জমির মাছের প্রজেক্টের জাল ফেলে প্রায় সাত লাখ ৮০ হাজার টাকার মাছ লুটপাট করেন অভিযুক্তরা।  

তিন দফায় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের বাড়ি, খামার ও মাছের প্রজেক্ট থেকে প্রায় ৮৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পণ্য লুটপাট করে অভিযুক্তরা। এসব ঘটনার বিচার দাবি করে ঘটনার প্রায় ১৪ মাস পরে গত ২ নভেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লবকে প্রধান করে ৫৭ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ। এ মামলায় ৪৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকার লালমনিরহাট প্রতিনিধি রাসেল হককে। এছাড়া সব অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন।  

এ মামলায় সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত ২ নভেম্বর রাতে এজাহারনামীয় দুজন এবং অজ্ঞাতনামা একজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।  

এ মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিক রাসেল হক বলেন, বিগত দিনে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদের নানা অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হয়রানি করতে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তিনি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।  

লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের বাড়ি, খামার ও মাছের প্রজেক্টে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ মামলায় এজাহারনামীয় দুইজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৪
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।