ঢাকা: রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থানা এলাকায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশাচালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনার তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- জালাল সরদার ওরফে মাইকেল (২১), ফজলে রাব্বি ওরফে কালা (২৫) ও মো. ইমরান (৩০)।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, আসামি জালাল সরদার ওরফে মাইকেল যাত্রী সেজে গভীর রাতে অটোরিকশা ভাড়া করেন। পরে তার সুবিধামতো নির্জন এলাকায় গিয়ে চালককে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যান তারা। পরে এসব রিকশা কম টাকায় বিক্রি করেন জালাল।
উপ-পুলিশ কমিশনার ছালেহ উদ্দিন বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে রিকশাচালক জিন্নাহ (৬০) গেণ্ডারিয়ার জুরাইনের একটি গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশে বের হন। পোস্তগোলা থেকে অজ্ঞাতনামা দুজন যাত্রী নিয়ে দিনগত রাত ৩টার দিকে গেণ্ডারিয়া থানার আঞ্জুমান কবর স্থানের সামনে পৌঁছালে ওই দুজন যাত্রী পেছন থেকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আঘাত করেন। রিকশাচালকের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে অজ্ঞাতনামা দুজন যাত্রী পালিয়ে যান।
উপস্থিত লোকজন ভুক্তভোগী রিকশাচালককে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর রিকশাচালক জিন্নাহর ছেলে মো. ইউসুফ হোসেন বাদী হয়ে গেণ্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ছালেহ উদ্দিন বলেন, মামলার তদন্ত চলাকালীন গত ১৫ অক্টোবর রাত ২টা ৫২ মিনিটের দিকে গেণ্ডারিয়ার দ্বীননাথ সেন রোডে কচি কাঁচা বিদ্যানিকেতন গলিতে রিকশাচালক আনোয়ারকে (৪০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে হত্যা করে আরও একটি অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ২১ অক্টোবর নিহত আনোয়ারের চাচাতো ভাই মো. মানিক একটি হত্যা মামলা করেন।
দুটি মামলার ঘটনার বিষয়ে ওয়ারী বিভাগের ডিসি বলেন, দুটি ঘটনারই অপরাধের কৌশল একই। পুলিশ নিশ্চিত হয় একটি নির্দিষ্ট অপরাধী চক্র এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তদন্তকালে ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনাসহ সব ধরনের তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দুজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, একই অপরাধী চক্র দুটি হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় দুজনের মধ্যে একজনের নাম জালাল সরদার ওরফে মাইকেল। পরে গত ২৪ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জালাল দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, আঞ্জুমান কবরস্থানের পাশে অটোরিকশাচালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় তার সঙ্গে ফজলে রাব্বি কালাও ছিলেন কিন্তু দ্বীননাথ সেন রোডে কচি কাঁচা বিদ্যানিকেতন গলিতে অটোরিকশাচালক আনোয়ারকে হত্যাসহ রিকশা ছিনতাই তিনি একাই করেছেন।
ওয়ারী বিভাগের ডিসি ছালেহ উদ্দিন বলেন, জালাল ছিনতাই করা অটোরিকশাটি গেণ্ডারিয়ার মো. ইমরান (৩০) নামে একজনের কাছে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ২৫ অক্টোবর রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে গেণ্ডারিয়া থানা পুলিশ ডিআইটি প্লট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিহত আনোয়ারের ছিনতাই করা অটোরিকশাটি ইমরানের কাছ থেকে উদ্ধার করে এবং ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা কেনার অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার জালাল সরদার ওরফে মাইকেল আঞ্জুমান কবরস্থানের সামনে অটোরিকশা ছিনতাই ও রিকশাচালক আনোয়ার হত্যার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ২৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পরে গোয়েন্দা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ৩ নভেম্বর দিনগত রাত ৩টার দিকে গেণ্ডারিয়ার কবরস্থান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফজলে রাব্বি ওরফে কালাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন তাকে আদালতে পাঠানো হলে ফজলে রাব্বি ওরফে কালা অটোরিকশাচালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় মাইকেলের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার মাইকেলও জিন্নাহ হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করে গত ৬ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। দুটি মামলারই সুষ্ঠু তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। ঘটনার পর পর এগুলো ফেলে দিয়েছেন। অভিযান চালিয়েও সেগুলো উদ্ধার করা যায়নি।
গ্রেপ্তার দুজন এর আগেও এমন কোনো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা স্বীকার করেনি। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ওয়ারী বিভাগের ডিসি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ারী থানা, যাত্রাবাড়ী থানা ও শ্যামপুর থানায় আগুনের ঘটনায় অনেক তথ্য পুড়ে গেছে। কিছু কিছু তথ্য আদালত থেকে নিয়ে এসে কার্যক্রম শুরু করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২৪
এমএমআই/আরআইএস