খুলনা: খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়াসহ এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার আপাতত সাময়িক কোনো সমাধান করা যায় কি না সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা-৫ (ফুলতলা ও ডুমুরিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রায় দুই মাস ধরে বিল ডাকাতিয়ার ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিয়ে সম্প্রতি খুলনা মহানগরীর শিরোমনি এলাকায় নিজ বাসভবনে সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
বিল ডাকাতিয়াসহ এ অঞ্চলের বিলগুলোতে কেন স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফুলতলা ও ডুমুরিয়ায় বিল ডাকাতিয়া, বিল মধুগ্রাম ও গুটুদিয়ার পাশে বিল পাবলা আছে। এসব বিলের আলাদা আলাদা সমস্যা। শুধু ডুমুরিয়ায় ৯০টা স্লুইচগেট আছে ছোট-বড় মিলিয়ে। এসব স্লুইচগেটের সামনে ও পেছনের অংশ পলিমাটি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। আমি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএন) বলেছি, শুকনো মৌসুমে স্লুইচগেটের সামনে ও পেছনের পলি মাটি কেটে দিতে। যার ফলে বৃষ্টির মৌসুমে পানিটা সহজে বের হয়ে যেতে পারবে। তাছাড়া প্রাকৃতিক কারণে নদী-খালে নাব্য কমে যাচ্ছে। মানুষসৃষ্ট কিছু কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। যেসব জমিতে আগে ধান চাষ হতো সেখানে এখন বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। যার ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু দিন আগেও গুটুদিয়ার ওখানে শৌলমারী স্লুইচগেট খুলতে গিয়ে তুমুল সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এক পক্ষ চাইছিল পানি সরাতে, আরেক পক্ষ সরাতে দেবে না; তারা বলছে, স্লুইচগেট খুললে তাদের বাড়িঘর তলিয়ে যাবে।
জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, জলাবদ্ধতার সংকটের সমাধানে ডুমুরিয়ার ইউএনও সবার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সচিব ও উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। সেচ বিভাগ বরিশাল থেকে ১০টি পাম্প এনে দিয়েছে। সেগুলো আমি বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছি। মাঝে হঠাৎ করে মুষলধারে বৃষ্টিতে পুনরায় সব তলিয়ে গেছে। ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের ও ঘরবাড়ি আবার ডুবে গেছে।
এ অঞ্চলের মানুষের কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, একজন মানুষ মারা গেলে তাকে যে শ্মশানে সৎকার করবে কিংবা মাটি দেবে, তার কোনো জায়গা নেই এ অঞ্চলের মানুষের। মানুষের শৌচকর্ম করার কোনো জায়গা নেই। সবই তলিয়ে গিয়েছে। মা বোনেরা নিদারুণ কষ্টে আছেন। আমি অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে দাবি করছি, একটি বড় প্রকল্প নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করার।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যখন খান-এ-সবুর যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন, আমাদের মুরুব্বিরা বলেছেন, আমরা তখন ছোট ছিলাম; এই পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ও স্লুইচগেটগুলো নাকি সেই সময় করা হয়েছে। তারপর আর কিছুই হয়নি। পরবর্তী সরকারের উচিত ছিল এগুলোর সংস্কার করা। কিন্তু তা তো কিছুই হয়নি, বরং খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা, খাল দখল করা এগুলোতে ব্যস্ত ছিল। ৯৬টা বিল আছে উত্তর দিকে। আমাদের এদিকেও প্রচুর বিল আছে। ভবদহের বিলের পানি তারা আন্দোলন করে ভৈরবে নামানোর ব্যবস্থা করেছে। আমরা যদি এই দিকের পানিটা ভৈরবে আফিম ও আলীম গেট থেকে বের করার ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে আমাদের এই সমস্যাটা দ্রুত সমাধান হবে। এখন আমরা কী করতে পারি, আমরা তো কোনো রাজনৈতিক সরকারে নেই। আমরা চেষ্টা করছি, আন্দোলন করছি। তাছাড়া ডিসি ও ইউএনও; এদের আমরা বারবার বলেছি। তারাও যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করছেন। আসলে এটা শত শত কোটি টাকার কাজ। এটা সরকার ছাড়া কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়। আমরা কী করতে পারি, দুই বালতি পানি ফেলে দিলাম অথবা খালের কিছু মাটি কেটে দিলাম; এই চেষ্টাটুকুই করতে পারি। কিন্তু এটার দ্বারা এ সমস্যার সমাধান সম্ভব না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি বিল ডাকাতিয়ার সমস্যা সমাধানের।
খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া এবং যশোর জেলার অভয়নগর ও কেশবপুর উপজেলা এলাকায় বিল ডাকাতিয়ার বিস্তৃতি। এতে চাষাবাদযোগ্য ৩০ হাজার একর জমি রয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে প্রায় দুই মাস ধরে তলিয়ে আছে বিলের জমি। মাছচাষিদেরও বিপাকে পড়তে হয়েছে। নদীতে পলি জমাট এবং অতিবৃষ্টিই এর মূল কারণ। এজন্য ফসল নষ্ট, আয়ের পথ বন্ধের পাশাপাশি চরম খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে এ এলাকায়। পরিস্থিতি এমন যে, বিল ডাকাতিয়া এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে স্থায়ী সমাধানের দাবি এখানকার পানিবন্দি প্রায় ১৫ লাখ মানুষের।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২৪
এমআরএম/এইচএ/