লালমনিরহাট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার যাত্রাবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ৯৮ দিন পর কবর থেকে মিরাজুল ইসলাম মিরাজের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ভোর ৫টার দিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচায় ইউনিয়নের আনছার খার পুকুর এলাকায় নিজ বাড়ির পাশে কবরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর ই আলম সিদ্দিকী লাশ উত্তোলনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের কর্মকর্তারাও তার সঙ্গে ছিলেন। লাশ উত্তোলন করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
জানা গেছে, স্থানীয় মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাশ করে সিএনজি চালক বাবার সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় পাড়ি জমান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। সেখানে ভাড়া বাসায় থাকতেন মিরাজের পুরো পরিবার। ঢাকা দনিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বিকাশ দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন মিরাজ। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ছোট দুই ভাইয়ের লেখাপড়াসহ পুরো সংসার চলত মিরাজের আয়ে। বাবার চিকিৎসায় ৩/৪ লাখ টাকা ঋণও করেছেন মিরাজ। সেই ঋণ পরিশোধে আর সংসারের হাল ধরতে লেখাপড়ার পাশাপাশি দোকান কর্মচারী হন মিরাজ।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে অন্যদের মতো যাত্রাবাড়ি থানার সামনে মাছের আড়ত এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন মিরাজ। তার খালাত ভাই কারখানা শ্রমিক মাজেদুল ইসলামও তার সঙ্গে যোগ দেন মিছিলে। সেখানে পুলিশের গুলিতে দুই ভাই মিরাজ ও মাজেদুল গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় মিরাজকে। অস্ত্রোপচার করে মিরাজের শরীর থেকে গুলি বের করা হলেও এর দুই দিন পর ৮ আগস্ট মারা যান মিরাজ। তার সঙ্গে যাওয়া গুলিবিদ্ধ খালাত ভাই মাজেদুল ইসলাম চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন।
মিরাজের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপিকে প্রধান করে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দুই/তিনশ জনের নামে ২৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা ( নং-১৭(৮) ২৪) দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের স্বার্থে মৃত মিরাজের ভিসেরা (ময়নাতদন্ত) প্রতিবেদনের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ি থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) কাওসার হোসেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা সিএমএম আদালতে বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক লাশ উত্তোলনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লালমনিরহাট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আদেশ দেন।
সেই আদেশে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ৯৮ দিন পর কবর থেকে মিরাজের মরদেহ উত্তোলন করে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা যাত্রাবাড়ি থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) কাওসার হোসেন বলেন, মিরাজ হত্যা মামলায় দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ। মৃতের ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এরপর এ মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হবে। তারা তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তাকে সহায়তা করতে মিরাজের কবরস্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠিয়েছে।
** ‘আমার কলিজার কলিজা কাটতে দিব না’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
আরএ