বরগুনা: আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’।
ভয়াল সিডরের ১৭ বছর পেরোলেও বরগুনায় অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নদীর পাশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো এখনও সংস্কার ও পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত হয়নি। তবে জেলা প্রশাসনের দাবি বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও আশ্রয় কেন্দ্র বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
১৫ নভেম্বর ২০০৭। সকাল থেকেই উপকূলের আকাশে গুরু গম্ভীর মেঘ আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে প্রচণ্ড বেগে উপকূলে আঘাত হানে স্মরণকালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর। মাত্র আধাঘণ্টার তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয় উপকূল। প্রবল তোড়ে বেরি বাঁধ উপচে এবং ভেঙে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহূর্তে পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তূপে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী উপকূলীয় জেলা বরগুনার এক হাজার ৩৪৫ জন মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ১৫৬ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার, আহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৫০। দুই লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ পরিবারে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৭৭ হাজার ৭৫৪টি। ফসলের ক্ষতি হয়েছে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৩ একর, গবাদি পশু মারা গেছে ৩০ হাজার ৪৯৯টি, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক হাজার ২৩৫, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ৪২০ কিলোমিটার, ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ/কালভার্ট এক হাজার ৭৯৭ মিটার।
এসব ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ না হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আবারও অসংখ্য জীবন হারানোর আশঙ্কায় এ জেলার মানুষজন। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথেই এদের বেশিরভাগের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সিডরের ১৭ বছর পূর্তি হলেও অনেক এলাকায় এখনও কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হয়নি। ভয়াবহ দিনটির কথা শরণ করে এখনও আতকে ওঠেন উপকূলবাসী।
এদিকে প্রতিবছর সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু সুফল পায়নি উপকূলবাসী। প্রতি বছরই আবারও বাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। এছাড়াও সিডরের সময় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় নিরাপদে আশ্রয় নিতে না পেরে মারা গেছেন অনেকে। এখনও বরগুনায় ১২ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে ৬৪২টি সাইক্লোন শেল্টারে যার ধারণা ক্ষমতা মাত্র দুই লাখ মানুষের। নদী তীরবর্তী চার লাখ মানুষ দুর্যোগের সময় থাকে মহা আতঙ্কে।
বরগুনা জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, জনসাধারণের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও আরও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৪
এসএম