ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নবান্নে মাছের মেলা, জমজমাট কেনাবেচা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
নবান্নে মাছের মেলা, জমজমাট কেনাবেচা

জয়পুরহাট: অগ্রহায়ণ মানেই বাঙালির ঐতিহ্যবাহী, অসাম্প্রদায়িক ও মাটির সঙ্গে চির বন্ধনযুক্ত নবান্ন উৎসবের মাস। এক সময় ঢেঁকির সুরেলা শব্দ জানান দিতো নবান্ন উৎসবের।

আর সেই নবান্ন উৎসবকে ফুটিয়ে তুলতে জয়পুরহাটে বসেছে এতিহ্যবাহী ‘নবান্নের মাছের মেলা’।

জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজারে রোববার (১৭ নভেম্বর) ভোর থেকে বসেছে এই মেলা। বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব নবান্ন উপলক্ষ্যে বসা মাছের এই মেলাকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।  

মেলায় ঢুকেই সারি সারি দোকানগুলোতে চোখে পড়ে মন-জুড়ানো সব মাছের পসরা। দূরদূরান্ত থেকে বিক্রেতারা এসেছেন মাছ বিক্রির জন্য। দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো মাছগুলো প্রায় সবই বড় আকারের। মেলায় ছোট মাছ নেই বললেই চলে। আছে বড় বড় রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প ও পাঙাশ মাছ। চাষের মাছের পাশাপাশি নদীর বাঘাইড়, গাঙ চিতল এবং দু-এক ধরনের সামুদ্রিক মাছও উঠেছে এ মেলায়। সবাই দরদাম করে মাছ কিনছেন। আকারভেদে ৩০০ থেকে ১৮০০ টাকায় প্রতি কেজি মাছ বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, নবান্ন উৎসবে প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে এখানে মাছের মেলা বসে। মেলায় অংশ নেন উপজেলার মাত্রাই, হাতিয়ার, মাদারপুর, হাটশর, হারুঞ্জা, পুনট, বেগুনগ্রাম, পাঁচগ্রামসহ আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের মানুষ। উৎসবে প্রতি বাড়িতেই মেয়ে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে নিমন্ত্রণ করা হয়। দূরদূরান্ত থেকেও লোকজন আসেন মেলায় মাছ কিনতে।

মাছ কিনতে আসা ক্রেতা হোসেন আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্ষেতলাল থেকে মাছ কিনতে এসেছি। কয়েক বছর ধরেই এই মাছের মেলা থেকে মাছ কিনি। এখানে অনেক বড় বড় মাছ পাওয়া যায়। তাই প্রতি বছর এই মেলার জন্য অপেক্ষা করি। গত বছরের চেয়ে এবারের মেলায় প্রচুর মাছ উঠেছে, কিন্তু দামটা একটু বেশি।

মোসলেমগঞ্জ থেকে আতাউর রহমান এসেছেন তার নাতিকে নিয়ে। তিনি একটি মাছ কিনেছেন ছয় হাজার টাকা দিয়ে। নাতি-নাতনি মেয়ে-জামাইসহ নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত করেছেন। সবাইকে নতুন চালের ভাত এবং পছন্দের মাছ খাওয়াবেন বলে জানান তিনি।

মাছ ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন বলেন, এবারের মাছের মেলায় অনেক বেশি লোক সমাগম হলেও মাছ বিক্রি সেই তুলনায় কিছুটা কম। তারপরও যেটুকু হয়েছে, সব খরচ বাদে লাভ ভালোই থাকবে।

মৎস্য খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলা সামনে রেখে এক বছর ধরে পুকুরে বড় বড় মাছ বাছাই করে রেখেছিলাম। তাই এবার পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলায় বড় বড় মাছ বিক্রি করতে পারছি।

তিনি আরও বলেন, মেলায় বহু ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের দেখে ভালো লাগছে। আসলে বাঙালি জীবন থেকে উৎসবগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এ রকম উৎসবে অংশ নিতে পারলে ব্যস্ততম জীবনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি আসে।

পাঁচশিরা মাছের মেলার ইজারাদার রেজাউল করিম বলেন, প্রতি বছর এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব বিরাজ করে। আজও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ মেলায় দিনে ৫০-৬০টি স্টলের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অন্তত কোটি টাকার মাছ কেনা-বেচা করবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসার তৌহিদা মোহতামিম জানান, এই মেলাকে ঘিরে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যেন ফরমালিন যুক্ত মাছ কিংবা নিষিদ্ধ মাছ বিক্রি করতে না পারেন, সে জন্য আমরা নিয়মিত তদারকি করছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।