ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সায়েন্সল্যাবে মোড়ে আড়াই ঘণ্টার সংঘর্ষ দুই কলেজের

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৪
সায়েন্সল্যাবে মোড়ে আড়াই ঘণ্টার সংঘর্ষ দুই কলেজের

ঢাকা: রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে মোড়ে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আড়াই ঘন্টা সংঘর্ষ চলতে থাকে। এর মধ্যে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করা রাখে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা।

এরপর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই কলেজের সংঘর্ষ থামাতে সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এ সংঘর্ষে আহত প্রায় অর্ধশতাধিক।

বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে দুপক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দিলে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে বিকেল ৫টার দিকে নিউ মার্কেট ও সায়েন্সল্যাব মোড়ের আশপাশের সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ সময় দেখা যায়, কোনো সাংবাদিক বা কোন ব্যক্তি যদি মোবাইল বের করে ছবি তোলে বা ভিডিও করেতে দেখলেই, তার ফোন চেক ও কেড়ে নেওয়া হুমকি দেয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা! একটি সূত্র জানায়, এই ঘটনায় ছাত্র, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল ও সাইন্সল্যাব এলাকার আশপাশের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন আহতরা।

ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ অবস্থায় ভবন থেকে ইট ছুড়তে থাকেন। আর নিচ থেকে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা ইট মারতে থাকে।  

এদিকে, দেখা যায় পুলিশের টিয়ারশেলে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়েন। সে সঙ্গে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও। এর কিছু সময় পর  ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী সিটি কলেজে প্রধান ফটকে এসে ভাঙচুর শুরু করেন। নিচ থেকে সিটি কলেজের ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থকেন। ক্ষুব্ধ হয়ে ভবনের ভেতরে আটকাপড়া সিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা ওপর থেকে ইটপাটকেল ছুড়েন। এতে কলেজটির সামনে থাকা পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী, অভিভাবক ও উৎসুক অনেকে আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কলেজের ভেতরে ঢুকতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশ করতে দেননি।

জানা যায়, বাসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা কেন্দ্র করে বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সায়েন্সল্যাব মোড়ে সিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজের বাসে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন। অন্যদিকে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করছেন, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন।

ঢাকা কলেজের ছাত্র রহিম জানান, ঢাকা কলেজের বাসে হামলা ও বড় ভাইদের ওপর হামলার খবর শুনে আমরা হল থেকে বের হয় সিটি কলেজে ভাঙচুর করেছি। এরপর থেকেই  সংঘর্ষ হয়।  

সিটি কলেজের ছাত্র আব্দুল আলিম বলেন, আমরা কিছুই করিনি। না জেনেই ঢাকা কলেজের ছাত্ররা আমাদের কলেজে এসে হামলা করে। এই ঘটনার বিচার চাই আমরা।

নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী জামিল জানান, আড়াই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলতে থাকে। যার কারণে সড়কে তীব্র যানজট থাকে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। তাছাড়া সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল।  

সায়েন্সল্যাবে সংঘর্ষ থামাতে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ: রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে কাঁদানে গ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।  

পুলিশ জানায়, আমরা বারবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের বোঝাতে চেয়েছি তারা বুঝতে চাইনি পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে  আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমরা বাধ্য হয়। এতে সায়েন্সল্যাব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দফায় দফায় সংঘর্ষ: ঘটনার সময় দেখো যায়, সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেমে থেমে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে। পরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং সেনা সদস্যকে ঢাকা কলেজের দিকে যেতে দেখা গেছে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থানের কারণে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

দুই কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ সায়েন্সল্যাব মোড়ে: ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সংঘর্ষ থেমে গেলেও এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবায়ের আরেফিন প্রিয় অভিযোগ করে বলেন, আজ প্রায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলেজ থেকে হেঁটে বাসায় ফেরার সময় ধানমন্ডি ১ নম্বর রোডে ১০-১৫ জন কলেজছাত্র দৌড়ে এসে আমার মাথার পেছন দিকে আঘাত করতে শুরু করে। শার্টের পকেট ছিঁড়ে আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয়। আমি তাদের বলি, ভাই আমি তো কিছুই করিনি, তাহলে কী সমস্যা। তারা বলল, এইটা কলেজে কলেজে মারামারি, তুমি বুঝবে না। ছেলেগুলো কলেজ ড্রেস পরে ছিল কিন্তু গলায় কোনো আইডি কার্ড ছিল না। সাদা শার্ট-কালো প্যান্ট ও ঘাড়ে ব্যাগ ছিল।  

এ বিষয়ে নিউ মার্কেট জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, সায়েন্সল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের একটি বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে সকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা গিয়ে সিটি কলেজে ভাঙচুর চালায়। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেলে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। তারা সায়েন্সল্যাবের দিকে এগোয়।  তখন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে সায়েন্সল্যাবের কাছাকাছি অবস্থান নেয়।  একপর্যায়ে দুপক্ষ ইটপাটকেল ছুড়ে। সংঘর্ষে জড়ায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।  

এর আগে, বুধবার দুপুরে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ ৭ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় ঢাকা কলেজের বাস যেতে তারা বাধা দেন এবং সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের 'শঙ্খনীল' নামে একটি বাস ভাঙচুর করে। এর পরপরই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সায়েন্সল্যাবে গেলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার পরপরই পুলিশ এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।


বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৪
এমএমআই/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।