ঢাকা: ভারত যে বাংলাদেশের দুষ্ট বন্ধু তা ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে বোঝা যায় বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেছেন, ভারত নিজেদের সুন্দর প্রতিবেশী হিসেবে দাবি করে। কিন্তু তারা বর্ডারে আমাদের লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশ নদী-পানির অধিকার আন্দোলনের পুরোধা’ আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির নেতা আতিকুর রহমান সালুর স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, পদ্মা নদীতে এক সময় যে পানি ছিল তা ফারাক্কা বাঁধের কারণে শুকিয়ে চরাঞ্চল হয়ে গেছে। ভারত পানি বণ্টনের যে চুক্তি করেছিল এ বাঁধ দেওয়ার মাধ্যমে সেই চুক্তি চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে। তারা আজকে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। যার ফলে দেশের আবহাওয়ারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতের যে পানি আগ্রাসন সে বিষয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সোচ্চার থেকে লড়াই করেছেন সালু ভাই। আজকে তার এ স্মরণসভায় আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই যে, ভারতের আগ্রাসনের বিষয়ে কোনো আপস করব না। আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমরা লড়ে যাব।
তিনি বলেন, এক ফারাক্কা দিয়ে বোঝা যায় ভারত আমাদের কী। বন্ধু না দুষ্ট বন্ধু। তারা যে দুষ্ট বন্ধু তা ওই বাঁধ দিয়েই বোঝা যায়। ভারত সম্প্রীতির কথা বলে, কিন্তু তারাই তাদের দেশে মসজিদ ভেঙে মন্দির বানায়। আর বাংলাদেশে সামান্য কিছু হলেই তারা লাফিয়ে পড়ে।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা যখন আওয়ামী লীগের হয়ে আমাদেরকে গুম করে খুন করে তখন সেটা আওয়ামী হিসেবে করে। আর যখন এর প্রতিশোধ আসে বা তাদের নিবারণ করতে যায়, তখন তারা হয়ে যায় সংখ্যালঘু। ভারত আজকে মানবতার কথা বলে। কিন্তু যখন ফেলানীকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়, তখন মানবতা কোথায় যায়?
তিনি বলেন, ভারত নিজেদেরকে সুন্দর প্রতিবেশী হিসেবে দাবি করে। কিন্তু তারা বর্ডারে আমাদের লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করছে। মদ ফেনসিডিল আমাদের দেশে ঢোকাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের রাজনীতিতে তারা হস্তক্ষেপ করছে। এসব করলে আমরা ভারতকে সুপ্রতিবেশী কীভাবে বলবো।
শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী প্রতিটা দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুবই খারাপ। নেপালের সঙ্গেও তাদের অবস্থান সাপে-নেউলে। এমনকি ভুটান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও ভারত সব সময় দাদাগিরি করে আগ্রাসন চালিয়ে গেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে যা করছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, আমরা ভারতকে বলতে চাই, তাদের আমরা বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। কোন দলের বন্ধু হিসেবে নয়। আগরতলায় যা হয়েছে, এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। ভারত সরকারকে বলতে চাই, এসব আগ্রাসন আপনাদেরকে বন্ধ করতে হবে।
বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত কখনো সহ্য করেনি। এজন্য পাকিস্তানিদের এদেশ থেকে তাড়িয়েছে। ভারতের আগ্রাসন সহ্য করা করা হবে না। তারা যদি ক্ষমা চেয়ে আগ্রাসন বন্ধ না করে, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠতে বাধ্য হবে। সবার আগে আমাদের দেশ ও দেশের মানুষ।
তিনি বলেন, ভারতের আগ্রাসন ও পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সংগঠনের চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও সাবেক সংসদ সদস্য জহিরুদ্দিন স্বপন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
ইএসএস/জেএইচ