ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সেন্টমার্টিনের বর্জ্য নেওয়া হবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রিসাইক্লিং প্লান্টে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
সেন্টমার্টিনের বর্জ্য নেওয়া হবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রিসাইক্লিং প্লান্টে

কক্সবাজার: দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সুরক্ষায় একসঙ্গে কাজ করবে দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএল ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।  

এ লক্ষ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে 'সেন্টমার্টিন পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই অর্থনীতি' শীর্ষক একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

 

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সেন্টমার্টিনে উদ্যোগটির উদ্বোধন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার।

এ উদ্যোগের অধীনে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত বর্জ্য পরবর্তীতে রিসাইক্লিং করা হবে। এছাড়া দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনে সহায়তা করা হবে। এর পাশাপাশি এ উদ্যোগের আওতায় দ্বীপবাসীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে নানা ধরনের কর্মসূচি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দ্বীপে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের যাতায়াত, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, পরিবেশ দূষণ, পর্যটকদের অসচেতনতার কারণে এখানকার প্রতিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বীপটিকে রক্ষায় নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণ-আরএফএল ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সবার সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই কেবল সেন্টমার্টিনকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশের সুরক্ষা নিয়ে নানা ধরনের কাজ করছে প্রাণ-আরএফএল। এর জন্য 'লেটস সেভ দ্য প্লানেট' নামে একটি প্লাটফর্ম রয়েছে। এ প্লাটফর্ম পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে জীবন-জীবিকা, ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে টেকসই করতে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, পণ্য প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামুদ্রিক 'ব্লু ইকোনমি' রক্ষা, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই অর্থনীতি নিশ্চিতে সহায়তা করতে ইউএনডিপির সঙ্গে আমরা এ উদ্যোগটি গ্রহণ করেছি। এই কর্মসূচির অধীনে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে দ্বীপের নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে আসবে। বর্জ্যগুলো যন্ত্রের মাধ্যমে সংকুচিত করে সমুদ্র পথে টেকনাফে আনা হবে এরপর নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে রিসাইক্লিং প্লান্টে নিয়ে আসার পর সেখানে রিসাইক্লিং করা হবে।

কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, দ্বীপের জেলেদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিতে তাদের সংগৃহীত সামুদ্রিক মাছ ও শুঁটকি সংগ্রহ করে সেগুলা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রিটেইল চেইন শপে সেন্টমার্টিন এক্সক্লুসিভ নামে একটি কর্নারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এর মাধ্যমে দ্বীপবাসীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

ইউএনডিপির হেড অব এক্সপেরিমেনটেশন ড. রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতে ইউএনডিপি সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। ইউএনডিপি প্রথমে দ্বীপে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করতো, এরপরে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ যুক্ত হওয়ায় এ কাজের গতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য ইউএনডিপির পক্ষ থেকে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়। গ্রুপটি দ্বীপের মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখবে বলে আশাকরি।

এর আগে পরিবেশ দূষণ রোধে দ্বীপবাসী ও পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বিচ ক্লিনিং কর্মসূচি পালন করা হয়। সোমবার সকালে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও মাই সেন্টমার্টিনের সহযোগিতায় এ আয়োজনে পর্যটক ও দ্বীপের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
অংশগ্রহণকারীরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের জাহাজ ঘাট থেকে শুরু করে দ্বীপের পশ্চিম বিচ পর্যন্ত সৈকতে পড়ে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করেন এবং সচেতনতা তৈরির জন্য র‍্যালি, বিভিন্ন ধরনের লিফলেট বিতরণ ও প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং স্থানীয় লোকজনকে এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।  
বিচ ক্লিনিং অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় বর্জ্য উৎপাদন কমানো, নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলা, নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথক করা ও প্রক্রিয়াকরণের কোনো বিকল্প নাই। এজন্য বিদ্যমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী ও উন্নত করার মাধ্যমে 'শূন্য-বর্জ্য' ধারণা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিচ ক্লিনিং কর্মসূচিতে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হেড অব কর্পোরেট ব্র্যান্ড নুরুল আফসার, হেড অব সাসটেইনেবিলিটি সুমাইয়া তাবাস্সুম আহমেদ, ইউএনডিপির ডেটা অ্যানালিটিকস কর্মকর্তা আহমেদ উল্লাহ কবির এবং মাই সেন্টমার্টিনের প্রতিনিধিবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।