ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উজান চরনওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ও বিপুলের মোবাইলফোন চুরির দ্বন্দ্বে খুন হয় শাহজাহান কবীর (২০)। কিন্তু মামলার এজাহারে রহস্যজনক কারণে এসব তথ্য গোপন করা হয়েছে।
গত ২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবদুল হাই স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবরে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারসহ (এসপি) সংশ্লিষ্টদের।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে আবেদনকারী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য মোছা. নাহিদা আক্তার বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে চলতি বছরের গত ২০ নভেম্বর শাহজাহান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ন্যায় বিচার চেয়ে নাহিদা আক্তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন দায়ের করেন।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার উজান চরনওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম ও বিপুল নামে দুই যুবক গাজীপুর জেলার মাওনা এলাকায় কর্মসূত্রে বসবাস করতেন। সেখানে আতিকুলে একটি মোবাইলফোন চুরি হলে বিপুল বাড়ি চলে আসেন। এতে আতিকুলের সন্দেহ হয় বিপুল ফোনটি চুরি করেছেন। এনিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে গত ঈদুল ফিতরের আগের দিন ১০ এপ্রিল রাতে দুপক্ষের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে আতিকুল পক্ষের বাবুর (২০) মাথা ফেটে যায়। এই মারপিটে নিশাত (২১) নামে এক যুবক জড়িত থাকায় তার বাবা লাল মিয়াকে মারধর করেন আতিকুলের লোকজন। এ ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ১১ এপ্রিল ঈদগাহ মাঠ থেকে ফেরার পথে বিপুলের পক্ষের শাহজাহান ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলা করে মারধর করেন আতিকুলের লোকজন। এতে রক্তাক্ত জখম হয়ে নিহত হন শাহজাহান কবীর।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় ওইদিনই নিহতের বাবা নূরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে আসামিদের মধ্যে সাতজন জামিনে আছেন, তবে পলাতক রয়েছেন অপর দুই আসামি।
অভিযোগ উঠেছে, রহস্যজনক কারণে ওই মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকেই আসামি হয়নি। এমনকি হত্যাকাণ্ডের আগের দিনের মারধরে আতিকুল পক্ষের বাবু রক্তাক্ত আহত হলেও এ ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। বরং হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আহত বাবু হাসপাতাল থেকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা না নিয়েই রহস্যজনক কারণে আত্মগোপনে চলে যান।
মামলার এজাহারে তথ্য গোপন করার বিষয়ে বাদী মো. নূরুল ইসলাম বলেন, আতিকুল ও বিপুলের মধ্যে গণ্ডগোলের পর আমার নির্দোষ ছেলে নিহত হয়। তবে ঘটনার পর মামলা করার সময় এতকিছু আমার মাথায় কাজ করেনি। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে এসব বিষয় মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে কারও কোনো গণ্ডগোল ছিল না। কিন্তু আমার ছেলে খুন হয়েছে। বর্তমানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দেবে-দেবে বলে টালবাহানা করছেন। শুনেছি, আসামি পক্ষ থানা-পুলিশকে অনেক টাকা দিয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কমল সরকার বলেন, তদন্ত কাজ চলছে, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের আগে মারধরের ঘটনায় আহত বাবুকে সন্ধান করেও পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ঘটনার সার্বিক তদন্তের আলোকে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে চার্জশিট দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলমান, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
এসআরএস