সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে তামাশার ছলে বড় চুল কাটতে বলায় বৃদ্ধকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় ১১ মাস অজ্ঞান থাকার পর বৃদ্ধ মানুদাকান্ত লাহিড়ীর (৬২) মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি ১১ মাস অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
এর আগে ১৬ জানুয়ারি মানুদাকান্তকে পিটিয়ে জখম করে একই গ্রামের মশিউর রহমান ও তার দুই ছেলে আবির রহমান (২৫) ও নিবির রহমান সনি (২২)।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে মানুদাকান্দ মারা যান। সদর থানা পুলিশ তার সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে। শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মানুদাকান্ত আহত হওয়ার পরপরই তার স্ত্রী সান্ত্বনা লাহিড়ী বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৪/৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে অগ্রিম জামিন নিয়েছিলেন।
জামিনের মেয়াদ শেষ হলে আসামিরা সিরাজগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে ১৮ দিন জেলহাজতে থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
ওসি আরও বলেন, ঘটনার সময় ৩২৬ ধারায় দায়ের করা মামলার সঙ্গে ৩০২ ধারা যোগ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
মামলা ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১৬ জানুয়ারি জামিরতা গুদিবাড়ি গ্রামে একটি চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন মানুদাকান্ত। সেখানে এলাকার কয়েক তরুণ আড্ডা দিচ্ছিল এবং হাসি-তামাশা করছিল। এ সময় মানুদাকান্ত তামাশার ছলে তাদের বড় চুল কাটতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একই গ্রামের মশিউর রহমানের বখাটে দুই ছেলে আবির রহমান ও নিবিড় রহমান তাদের বাবার কাছে অভিযোগ করেন। এরপর ওই দিনই মশিউর মানুদাকান্তকে ফোনে বাড়িতে ডেকে আনেন। তিনি আসার সাথে সাথে বাবা ও তার দুই ছেলেসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তাকে বেধড়ক পেটায় এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রাস্তায় ফেলে রাখে।
স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে শাহজাদপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে বগুড়া, পরে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঢাকার ওই হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে না পারায় অজ্ঞান অবস্থাতেই তাকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ হাসপাতালেই অজ্ঞান চিকিৎিসাধীন ছিলেন মানুদাকান্ত।
নিহতের ভাতিজা তুষার কান্ত লাহিড়ী বলেন, আমরা সেদিন রাতেই কাকাকে বগুড়া থেকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। মারধরে তার মাথার খুলি ভেঙে গিয়েছিল। মাথার অস্ত্রোপচারের পরে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর খরচ যোগাতে না পেরে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই হাসপাতালেই তিনি সেখানেই অজ্ঞান অবস্থায় ভর্তি ছিলেন। প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ করেও কাকাকে বাঁচাতে পারলাম না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা আদালতে ৩০২ ধারা সংযোজন করার আবেদন করেছি। আদালত এ আবেদনের শুনানি করবে। আগামীতে ধার্য তারিখ আছে। ধার্য তারিখে আসামিরা আদালতে উপস্থিত হলে বিচারক হয়ত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারেন। আর আদালতে তারা হাজির না হলে আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন। ওয়ারেন্ট ইস্যু করলেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
এএটি