নাটোর: নাটোরের লালপুরে অনুমোদন ছাড়াই প্রতি বছরের মতো এবারও যত্রতত্র গড়ে উঠছে আরও পাঁচ নতুন ইটভাটা। ফসলি জমি, বসতি এলাকা, পদ্মা নদীর চরে গড়ে উঠেছে ইটভাটাগুলো।
জানা যায়, লালপুর উপজেলায় অন্তত ৪৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০টি ছাড়া বাকিগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে। এছাড়া এবছরও আইন অমান্য করে উপজেলার পদ্মার চরে এসএমকে, এজিআর, এজিএস ও চরজাজিরা এলাকায় আরএফএল এবং অমৃতপাড়া এলাকায় এমএসপি নামে পাঁচটি নতুন ভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধভাবে এসব ইটভাটার কার্যক্রম চলছে।
এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে গড়ে ওঠা প্রায় অর্ধশত ইটভাটাতেও নিম্নমানের কয়লার সঙ্গে কাঠ পুড়িয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চলছে ইট তৈরির কার্যক্রম। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়ার কারণে এ অঞ্চলের জনজীবনসহ গাছ ও কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান ও ইউনুস আলী বাংলানিউজকে জানান, ভাটার কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যায় এবং আমের গুটিতে কালো দাগ পড়ে। এছাড়া ওভার লোডে ভাটার মাটি আনা নেওয়ায় রাস্তাঘাটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একেএম শাহাব উদ্দীন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই দূষিত বাতাস শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে রক্তের মাধ্যমে দেহে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বমি, মাথাব্যথা, বুক ব্যথা, অ্যাজমা, এলার্জি, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, এমনকি ক্যানসারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক মদদে নতুন করে ইটভাটা গড়ে উঠছে। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর মনিটরিংয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আইন থাকলেও নিজ স্বার্থ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেটা প্রয়োগ করেননি। এ অঞ্চলের পরিবেশ বাঁচাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি বলে জানান তিনি।
এদিকে, কাঠ পোড়ানো বিষয়টি স্বীকার করেন 'এসএমকে' ভাটামালিক জাহিদুর রহমান। আর 'এজিএস' ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী জিয়ারুল ও 'এজিআর' ব্রিকসের জিল্লুর রহমান দাবি করেন তারা গত ৪ মাস আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে ইট প্রস্তুত করণের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
তবে নাটোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ২০২২ সালে নাটোরে অফিস স্থাপনের পর থেকে কোনো ইটভাটাকে পরিবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। যারা অবৈধভাবে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সেসব ভাটায় দ্রুতই অভিযান চালানো হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর মনিটরিংয়ে ব্যর্থতা ও কর্মকর্তা ম্যানেজের অভিযোগ সঠিক নয়।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ ইটভাটার তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। তালিকা হাতে পেলে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এসব ভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পরিবেশ বিপন্ন হবে এমন কাজ করতে দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪
আরএ