ঢাকা: একেবারে প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) ঘটা হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং ষড়যন্ত্রগুলোকে জাতির সামনে তুলে ধরবে সংশ্লিষ্ট কমিশন। এ কার্যক্রমে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে সেদিকেও কড়া নজর রাখবেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের প্রথম সভা শেষে এসব কথা বলেন কমিশন প্রধান ও বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক এ এল এম ফজলুর রহমান।
এ এল এম ফজলুর রহমান বলেন, আমরা কোনো রকম প্রভাবিত হবো না। কোনো কিছুর দ্বারা আমরা প্রভাবিত হবো না। যেহেতু এটা জাতীয় সমস্যা, হাজার বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি যে অল্প সময়ে এতো অবিচার ও এতো মানুষ নিহত হয়েছে। আমি দেশবাসীকে জানাতে চাই, বিডিআরের ঘটনার পর যারা নির্যাতিত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন সব কিছু আমরা নজরে নেব। পাশাপাশি অতি সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা তাদের ক্ষত নিরাময় করার চেষ্টা করবো। আমাদের কাজ শেষে প্রশ্ন যেন না উঠতে পারে, সেদিকে আমরা সজাগ থাকবো। নিরপেক্ষ থেকে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ষড়যন্ত্রকে জাতির সামনে তুলে ধরা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নিজেদের কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত কমিশন প্রধান বলেন, আমাদের কিছু চিঠি লিখতে হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি আমাদের সাচিবিক সুবিধা দিতে হবে। অফিস দিতে হবে। আমরা বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ক্লোন করেছি। তিনি আমাদের সাদরে গ্রহণ করেছেন। ৫ রাইফেল ব্যাটালিয়নের একটা অফিস আমাদের কাজ চালানোর জন্য দিয়েছেন। আমরা কতগুলো বিষয় চিহ্নিত করেছি। এটা কিন্তু অন্য কমিশনের মতো নয়। এটা অন্যরকমের কমিশন। যেখানে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে চিহ্নিত করতে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা কিছু বাড়তি বিষয় চেয়েছি, যার মধ্যে আমরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তা, পরিবহন সুবিধা, ইত্যাদি। এই কমিশনের সভাপতির পদমর্যাদা হতে হবে একজন উপদেষ্টার সমান। কারণ, তাকে দেশি-বিদেশি মানুষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই সমমর্যাদা থেকে যেন কাজ করতে পারি। পাশাপাশি কমিশনের অন্য সদস্যদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারকের মর্যাদা চেয়েছি। এই সবগুলো হলেই আমরা পরবর্তী মিটিং ও সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করবো। প্রতিটি মিটিং শেষে যে বিষয়গুলো জানানো উচিৎ সেগুলো আমরা দেশবাসীকে জানাবো। আমরা কাউকে অন্ধকারে রেখে কাজ করতে চাই না।
বিচার প্রক্রিয়া কি হবে জানতে চাইলে কমিশন প্রধান বলেন, আমরা চারজন দেশি-বিদেশি আইন বিশেষজ্ঞকে সম্পৃক্ত করতে বলেছি। বাংলাদেশের একজন সিভিল আইন বিশেষজ্ঞ, সামরিক ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ একজন পেলে ভালো হয়। দুজনকে আমরা বাংলাদেশ থেকে যুক্ত করতে বলবো। আর যেহেতু বিদেশি শক্তিকে সনাক্ত করতে হবে তাই বিষয়টা আন্তর্জাতিক হয়ে গেছে। তাই আমরা অপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ দুজনকে যুক্ত করতে আবেদন করবো।
কমিশন গঠন করার পরপরই বিজিবির একজন সাবেক মহাপরিচালক দেশ ত্যাগের চেষ্টা করেছিলেন। বিডিআরের ঘটনার আগে-পরে তদন্তসহ নানা কিছুতে অনেকেই জড়িত ছিল। তাদের দেশ ত্যাগের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবেন কি না, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। উত্তরে কমিশন প্রধান বলেন, আমরা কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করবো। যদি আমরা মনে করি তদন্তের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে তাকে দেশে থাকতে হবে তাহলে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেব।
যেহেতু বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কথা বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো দেশের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে এ এল এম ফজলুর রহমান বলেন, আমরা কোনো দেশকে সনাক্ত করতে চাই না। আমরা নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে এগিয়ে যেতে চাই। সেটা করতে গিয়ে দালিলিক ও সারকামস্টেশিয়াল প্রমাণে যারা দায়ী হবে তখন আমরা মতামত দেবো। যেহেতু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে তার একটা অংশ আমাদের দেশের পার্টে যারা আছেন তারা এই কমিশনের জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবেন। পাশাপাশি ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর অনেকেই দেশ থেকে পালিয়েছেন। তারা যেসব দেশে গেছেন সেসব দেশের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করবো। এরপর যদি না হয় তাহলে ওই দেশে গিয়ে বক্তব্য নিতে আমরা টিম পাঠাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
এমএমআই/এমজে