ঢাকা, বুধবার, ১৮ পৌষ ১৪৩১, ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আইইউবিতে স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স কলোকুয়াম

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
আইইউবিতে স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স কলোকুয়াম

আলোর গতি ধ্রুব। মহাবিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে হাজার কোটি আলোকবর্ষ পথ পাড়ি দিয়ে এলেও আলোর গতি কমবেশি হয় না।

আলোর এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের কারণেই বহুদূরের ছায়াপথের আলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় এবং সঙ্গে করে নিয়ে আসে সেই ছায়াপথের জন্ম, গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে নানা তথ্য।  

গত ১৯ ডিসেম্বর ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-তে এসব বিষয় নিয়েই কথা বলছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. লামীয়া আশরাফ মওলা। আইইউবির সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি, স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (কাসা) আয়োজিত ২য় কলোকুয়ামে বক্তব্য রাখছিলেন ড. মওলা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলেসলি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং কাসার সহযোগী সদস্য।  

বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ গত ১১ ডিসেম্বর ড. লামীয়া মওলার একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার নিয়ে বহুল আলোচিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। আইইউবির কাসা’র সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানীর প্রকাশিত এটিই প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ। ১৯ ডিসেম্বর মূলত এই প্রবন্ধ নিয়েই আলোচনা করছিলেন ড. মওলা।  

এই গবেষণায় নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)-এর তথ্য ও ছবি ব্যবহার করে ‘ফায়ারফ্লাই স্পার্কল’ নামের একটি নবীন গ্যালাক্সি আবিষ্কারের কথা বলা হয়েছে, যা বিগব্যাংয়ের মাত্র ৬০ কোটি বছর পর গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ড. মওলা ছাড়াও এই গবেষণায় অংশ নেন উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং জাপানের ২১ জন বিজ্ঞানী।  

ড. মওলার বক্তৃতা শুনতে একত্রিত হয়েছিলেন প্রায় ১০০ অংশগ্রহণকারী, যাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একজন স্কুল শিক্ষার্থীও ছিলেন। ড. মওলা আলোচনা শুরু করেন সহজ ভাষায় মহাবিশ্বে মানুষের অবস্থান ব্যাখ্যা করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিলো ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে বিং ব্যাঙের মাধ্যমে। ড. মওলা একটি কসমিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে এই সুদীর্ঘ সময়কে উপস্থাপন করেন এক বছরের হিসাবে, যাতে অংশগ্রহণকারীরা এই বিপুল সময়কালের বিভিন্ন ধাপগুলো সহজে বুঝতে পারেন।

দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো পর্যবেক্ষণে এবং তাদের গঠন সম্পর্কে ধারণা পেতে উচ্চ-রেজলুশনের টেলিস্কোপ, বিশেষত জেমস ওয়েবের গুরুত্ব তুলে ধরেন ড. মওলা। আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির উদাহরণ ব্যবহার করে তিনি এর গঠন ও ছোট ছোট নক্ষত্রপুঞ্জ একত্রিত হয়ে কিভাবে গ্যালাক্সি তৈরি হতে পারে তা বিশ্লেষণ করেন।  

বক্তৃতায় তিনি তার ২০২২ সালের আবিষ্কার, নয় বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সি ‘স্পার্কলার’-এর কথায় ফিরে যান। জেমস ওয়েব এবং গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং ব্যবহার করে খোঁজ পাওয়া স্পার্কলারের পাশে দেখা গেছে নক্ষত্রদের গোলাকার পুঞ্জ বা গ্লোবিউলার ক্লাস্টার ‘স্পার্কলস’, যা বিগব্যাঙের ৭০০ মিলিয়ন বছর পর গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। ড. মওলা আবিষ্কৃত স্পার্কলারকে মনে করা হয় মহাবিশ্বের প্রাচীনতম নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। এই আবিষ্কার নিয়ে বিবিসি ও সিএনএন-এ সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।

এরপর তিনি সাম্প্রতিক আবিষ্কার ‘ফায়ারফ্লাই স্পার্কল’ নিয়ে আলোচনা করেন, যা আবিষ্কৃত হয়েছিলো কানাডিয়ান নিয়ারিস আনবায়াসড ক্লাস্টার সার্ভে (কানাক্স)-এর অংশ হিসেবে। বিগব্যাঙের মাত্র ৬০০ মিলিয়ন বছর পর গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া এই গ্যালাক্সি শনাক্ত করা হয় গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিংয়ের মাধ্যমে। এর পাশেই ছিল দুটি সঙ্গী গ্যালাক্সি: ‘ফায়ারফ্লাই বেস্ট ফ্রেন্ড’ ও ‘ফায়ারফ্লাই নিউ বেস্ট ফ্রেন্ড’। এই আবিষ্কার নিয়ে রয়টার্স এবং বিবিসি-তে সংবাদ প্রকাশিত হয় কয়েক সপ্তাহ আগে।

জেমস ওয়েবের উন্নত যন্ত্রের সাহায্যে ড. মওলা ও তার দল আলোক বর্ণালী বা স্পেকট্রাম বিশ্লেষণ করে গ্যালাক্সিগুলোর রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করেন এবং রেডশিফটের মান হিসাব করে পৃথিবী থেকে তাদের দূরত্ব নির্ণয় করেন। ফায়ারফ্লাই-এর বর্ণালী বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে: যেসব উপাদান দিয়ে এটি গঠিত, তার মধ্যে ভারী ধাতুর উপস্থিতি কম এবং এর তাপমাত্রা ৪০ হাজার কেলভিন, যা আমাদের সৌরজগতের সূর্যপৃষ্ঠের চেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত। এতে বোঝা যায় যে ১৩.২ বিলিয়ন বছর আগে এটি একটি নবীন গ্যালাক্সি ছিলো। আমাদের মিল্কি ওয়ের সঙ্গে এর অনেক মিল রয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা মনে করছেন আমাদের গ্যালাক্সিটিও সে সময় একই রকম অবস্থায় ছিলো।

২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আইইউবির সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি, স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (কাসা) মহাকাশবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা ও শিক্ষায় নিবেদিত। কেন্দ্রটি একাধিক একাডেমিক অনুষ্ঠান এবং ‘দূরবিন’ (দূর বিশ্বের নাগরিক) প্রকল্পের মতো কর্মসূচি আয়োজন করেছে, যা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে মহাজাগতিক বিভিন্ন বিষয় অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।