ঢাকা, সোমবার, ২২ পৌষ ১৪৩১, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হচ্ছে ‘জনতার বাজার’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৫
ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হচ্ছে ‘জনতার বাজার’ সভায় ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহাম্মেদ।

ঢাকা: নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং জনজীবনে স্বস্তি আনয়নের লক্ষ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘জনতার বাজার’ নামে ন্যায্যমূল্যের বাজার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

শনিবার (০৪ জানুয়ারি) মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার জাকের ডেইরি ফার্ম সংলগ্ন সরকারি মাঠে এ উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় ওই ঘোষণা দেন ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহাম্মেদ।

তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই সরাসরি কৃষক ও ভোক্তাদের সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি বিশেষ বাজার চালু করা হবে। এ বাজারে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করা হবে।

এ উদ্যোগের লক্ষ্য সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব এড়িয়ে কৃষক ও ভোক্তাদের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা। এতে পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আমরা প্রাথমিকভাবে ঢাকার ছয়টি স্থানে এ ধরনের বাজার চিহ্নিত করেছি। পর্যায়ক্রমে এর পরিসর বাড়ানো হবে। বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণ করে স্থানীয় উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী এবং বেকার যুবকদের সম্পৃক্ত করা হবে। শুধুমাত্র খুচরা বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে এবং পণ্য ক্রয়ের জন্য একটি নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুসরণ করা হবে। ক্রেতারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা পরিশোধ করে একটি কোড পাবেন, যা দেখিয়ে পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই এই বাজারের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারের কৃষি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এই উদ্যোগে সহযোগিতা করবে।  

সভায় অংশগ্রহণকারী সবার মতামত ও সহযোগিতা কামনা করে জেলা প্রশাসক বলেন, এই উদ্যোগ সফল করতে আপনাদের পরামর্শ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, একসঙ্গে কাজ করে এটি বাস্তবায়ন করি।

তিনি জানান, ঢাকায় প্রাথমিকভাবে ছয়টি বাজার স্থাপন করা হবে। রমজান মাসে এই বাজারগুলোর মাধ্যমে ভোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ উদ্যোগের বিস্তৃতি ঘটানো হবে।

প্রস্তাবিত ন্যায্যমূল্যের বাজারের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো- জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর-সংস্থার সহযোগিতায় বাজার পরিচালিত হবে। দেশের যে স্থানে যে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম সেখান থেকে পণ্য সংগ্রহ ও পরিবহন করে সরাসরি ঢাকায় নিয়ে এসে বিক্রয় করা হবে। ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় উদ্যোক্তা/ছাত্র-জনতাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রতিটি পণ্য জেলা প্রশাসন/সংশ্লিষ্ট কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করা হবে। ক্রয়মূল্যের সঙ্গে প্রকৃত পরিবহন খরচ এবং উদ্যোক্তাদের প্রদেয় যৌক্তিক মুনাফা যোগ করে ন্যায্যভাবে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হবে। যে কোনো চাষি, খামারি বা উৎপাদনকারী উৎপাদিত নিজস্ব পণ্য সরাসরি উক্ত বাজারে বিক্রয় করতে পারবেন। হিসাব সংরক্ষণ ও সার্বিক কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য সফটওয়্যার নির্মাণ করা হবে; যাতে প্রতিটি পণ্যের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্য অনলাইনে প্রদর্শিত হবে।

এ উদ্যোগে স্থানীয় উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া পণ্য পরিবহন ও মান নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারি থাকবে।

এলাকার বাসিন্দারা এ প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছে এটি বিশেষত নিম্নআয়ের মানুষের জন্য একটি বড় সহায়ক হবে বলে মতামত প্রকাশ করেছেন। তবে তারা ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সভায় আশা প্রকাশ করা হয় যে, সব পক্ষের সমন্বয়ে এ উদ্যোগটি টেকসইভাবে পরিচালিত হবে এবং রাজধানীর মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখবে।  

আলোচনায় আরও অংশ নেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পারভেজ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. শামীম হুসাইন।

এছাড়া খাদ্য অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। ছাত্র প্রতিনিধি এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সভায় তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৫
কেআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।