মাদারীপুর: দুই বছর আগে প্রথমবারের মতো মাশরুম চাষ শুরু করেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার আখতার হোসেন নামে এ ব্যক্তি। প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে পুরোপুরি বন্ধ করে দেন মাশরুম চাষ।
রোববার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার দ্বিতীয়াখণ্ড ইউনিয়নের চরকেশবপুর এলাকায় তার বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, বসতবাড়ির বেশিরভাগ অংশজুড়েই মাশরুম খামার। ঘরের দ্বিতীয়তলার পুরোটাজুড়েই মাশরুমের সিলিন্ডার ঝুলছে ছাদের সঙ্গে। সারিবদ্ধ সিলিন্ডার থেকে বের হয়েছে মাশরুম। অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে, আলো-আঁধারি ঘরের মধ্যেই শখের চাষ থেকে বাণিজ্যিক লাভের স্বপ্ন এখন আখতার হোসেনের।
জানা গেছে, শিবচরের দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের চরকেশবপুর এলাকার আখতার হোসেন হাওলাদার এলাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শিবচরের এআই টেকনেশিয়ান হিসেবে কর্মরত।
বাড়িতে নানা জাতের কবুতরও রয়েছে তার। ব্যতিক্রমী কিছু করতেই মাশরুম নিয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। পরে ঢাকার সাভারে এ চাষাবাদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তবে গ্রামে মাশরুমের তেমন চাহিদা না থাকায় প্রথমত ঝুঁকি নিতে চাননি। আগ্রহ থেকে অবশেষে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। কিন্তু কোনো পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকায় সব মাশরুম সে সময় নষ্ট হয়ে যায়। এরপর বন্ধ করে দেন চাষাবাদ। এর বছর খানেক পরে আবারও শুরু করেন। নিজের ঘরের দ্বিতীয় তলায় মাশরুম চাষের জন্য আলাদা কক্ষ তৈরি করেন। সেখানে দুই শতাধিক খড়ের সিলিন্ডার রয়েছে এখন। মাটি থেকে ওপরে ঝোলানো খড়ের সিলিন্ডারগুলো ওপর থেকে নিচে সারিবদ্ধ করে সাজানো। সিলিন্ডারের গা ফুঁড়ে বেশ হচ্ছে মাশরুম। দ্বিতীয় ধাপে সঠিক পরিচর্যার ফলে সফলতার মুখ দেখেন তিনি। প্রতিটি সিলিন্ডার থেকেই থরে থরে বের হয় মাশরুম।
আখতার হোসেন বলেন, এখানে দুই থেকে আড়াইশ খড়ের সিলিন্ডার রয়েছে। সব মিলিয়ে এক লাখ টাকা ইনভেস্ট করতে হয়েছে। এখন খুব একটা খরচ নেই। শীতকালে ডব্লিউএক্স, এসকে ৫১ এবং পিও ২ এ তিন জাতের মাশরুম ভালো হয়। এখানে তিন জাতেরই মাশরুম রয়েছে। শীত ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় পিও ১০ জাতের মাশরুম চাষ হয়। মাশরুম চাষাবাদ খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তবে নিয়মিত পরিচর্যার মধ্যে পানি স্প্রে করতে হয়। কারণ মাশরুম চাষের জন্য স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দরকার। বড় বড় মাশরুম ফার্মে এসি থাকে। আমি এসির ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাই নিয়মিত ভিজিয়ে ঠান্ডা রাখতে হয়।
গ্রামে মাশরুমের বাজার কেমন জানতে চাইলে আখতার হোসেন বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ার পরে মাশরুম চাষে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। কারণ ঢাকাতে মাশরুম পাঠানো যাবে। আমি শুধু শিবচরের চিন্তা করে চাষাবাদ শুরু করিনি। কারণ এখনো গ্রামে ততটা চাহিদা তৈরি হয়নি। তবে হচ্ছে। শিবচর বাজারে এখন পাইকারি বিক্রি করছি। অনেক রেস্টুরেন্টও নিচ্ছে। আর ঢাকাতে পাইকারি পাঠাচ্ছি। গ্রামে মাশরুমের চাহিদা তৈরি হতে আরও সময় লাগবে। অনেকে এর পুষ্টিগুণ এবং কীভাবে খাবে এ বিষয়ে জানে না।
মাশরুমের খামার ঘুরে দেখা গেছে, বসতঘরের অর্ধেকজুড়েই মাশরুম চাষের নানা উপকরণ। ঘরের মেঝেতে খড় ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। আরেক কক্ষে সিলিন্ডার তৈরি করে রাখা। মাশরুমের ‘বীজ’ প্রক্রিয়ার জন্য রয়েছে আলাদা কক্ষ।
আখতার হোসেন বলেন, মাশরুম বাজারে বিক্রির উপযোগী হতে কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগে। দুই মাস পর একদিন অন্তর অন্তর মাশরুম বিক্রি করার উপযোগী হয়। বর্তমানে একদিন পর পর বাজারে কমপক্ষে ১৫ কেজি করে মাশরুম বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয় মাশরুম। খুচরা খুব একটা হয় না এলাকাতে। বেশির ভাগ মাশরুম ঢাকাতে পাঠানো হয়। তাছাড়া শিবচরের সবজির বাজারেও ইদানিং আমার উৎপাদিত মাশরুম পাওয়া যাচ্ছে।
পুষ্টিগুণ বিবেচনায় মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার। শহরে মাশরুমের চাহিদা থাকলেও গ্রামে এর চাহিদা কম রয়েছে। তবে দিন দিন মাশরুম খাদ্য হিসেবে গ্রামাঞ্চলেও প্রচলিত হচ্ছে। আক্তার হোসেনের এ মাশরুম চাষাবাদ এলাকার যুবকদের মধ্যেও উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে আগ্রহের সৃষ্টি করছে। সঠিকভাবে মাশরুম চাষ করতে পারলে স্বল্প পুঁজিতেই মাসে ‘ভালো’ টাকা রোজগার করা সম্ভব বলে জানান মাশরুম চাষি আক্তার হোসেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে বড় পরিসরে মাশরুম চাষ করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৫
আরবি