ঢাকা, বুধবার, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অনাহারে ছাত্র-আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সবজি বিক্রেতা রায়হানের স্ত্রী-সন্তানরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৫
অনাহারে ছাত্র-আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সবজি বিক্রেতা রায়হানের স্ত্রী-সন্তানরা গুলিবিদ্ধ রায়হান

হবিগঞ্জ: পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়েসহ ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত সবজি বিক্রেতা রায়হান মিয়া (৩০)।

কোনোরকম ৫ লাখ টাকা ধার-দেনা করে শরীরে ৫টি অস্ত্রোপচার করাতে পারলেও এখন টাকার অভাবে তার চুলায় নিয়মিত আগুন জ্বলে না।

রায়হান হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় দোয়াখানী মহল্লার আব্দুল হামিদের ছেলে। আগে ভ্যানগাড়িতে করে পাড়ায় পাড়ায় সবজি বিক্রয় করতেন, তবে আহত হওয়ার পর আর কাজে যাওয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫ আগস্ট সকাল ১১টায় থানার সামনে ছাত্র-জনতার মিছিলের মধ্য থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং হঠাৎ পুলিশের একটি গুলি রায়হানের  কোমরের নিচে বিদ্ধ হয়ে পেট ছিদ্র হয়ে বের হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ অজ্ঞান হলে আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

একই সময় গুলিবিদ্ধ হওয়া আরও চারজনের মধ্যে দুইজন মারা যান এবং রায়হানের সঙ্গে আহত রিয়াদ মিয়া নামে আরেকজন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এখনও চিকিৎসাধীন।

গুলিবিদ্ধ রায়হানের টানা চার মাস চিকিৎসা হয়েছে। পেটে আলাদা ৫টি অস্ত্রোপচার হয়।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ টাকা চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় মহাজনদের থেকে ধার-দেনা করে এই টাকা জোগাড় করা হয়েছে। এখন পাওনাদাররা টাকার জন্য বাড়ি আসছে।

রায়হান বলেন, মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পেছনে ফিরে তাকিয়েছিলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয়। এরপর আর কিছু বুঝতে পারিনি, জ্ঞান ফিরেছে হাসপাতাল যাওয়ার পর। ’

রায়হানের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, পিতা-মাতা, স্ত্রী ও চার সন্তানসহ পরিবারে আরও ছোট দুই ভাই রয়েছে। তিনিই প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এখন কাজে যেতে না পারায় নিয়মিত বাজারখরচ করতে পারেন না।

রায়হানের স্ত্রী আরফিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী কাজে যেতে পারেন না, সেলাইয়ে ব্যথা হয়। ছোট দুই দেবর সামান্য রোজগার করে আনে, তা দিয়ে দিনের খাবারই চলে না। কখনো কখনো না খেয়ে থাকতে হয়। অন্যদিকে পাওনাদারেরা টাকার জন্য বাড়িতে আসে।  

রায়হানের বাবা আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমার দিনমজুর ছেলে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এখন আমার পরিবার বিপাকে। ৫ মাস পরও সরকার একবার খোঁজ নেয়নি’ বলে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।  

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রায়হান নামে এক সবজি বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে সে খবর পেয়েছি। তার সঙ্গে কথা বলে সরকারের পক্ষ থেকে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।