গোপালগঞ্জ: সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট ও ন্যাচারাল পার্কে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। এসময় তদন্ত ও অনুসন্ধানে সুনির্দিষ্ট কিছু কর ফাঁকির তথ্য পেয়েছে সেলটি।
শুধু গোপালগঞ্জ নয় সাবেক আইজিপির দেশের সব স্থাপনায় অভিযান চালানো হবে। কর ফাঁকির তথ্য কর বিভাগকে জানানো হবে বলেও জানায় তদন্ত দল।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) উপ-পরিচালক শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সাভানা ইকো রিসোর্ট ও ন্যাচারাল পার্কে আসেন। এরপর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা পার্কের ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন। তারা পার্কের বিভিন্ন অফিস কক্ষের কম্পিউটার ও ফাইলপত্র যাচাই-বাছাই করে তথ্য সংগ্রহ করে। এসময় তদন্ত দলটি কর ফাঁকির সত্যতা পায়। তবে কয়েকটি বিভাগের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর কি পরিমাণ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে তা জানাতে পারবেন বলে জানান, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) উপপরিচালক শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী।
এ অভিযানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) উপপরিচালক মো. জিল্লুর রহমান ও শরীফ মো. ফয়সালসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত শেষে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) উপপরিচালক শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী গণমাধ্যমকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু কর ফাঁকির অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট ও ন্যাচারাল পার্কে আমরা একটি তদন্তে এসেছিলাম। তদন্ত ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু কর ফাঁকির তথ্য পেয়েছি। এছাড়া এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং, পিডাব্লিউডি, কৃষি, মৎস্য ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রতিনিধিরা এসেছেন। সুনির্দিষ্ট করে ভ্যালুয়েশন তথ্য পাওয়ার পর আমরা বলতে পারব, যে কর ফাঁকির পরিমাণটা আসলে কত? তবে কর ফাঁকির সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এখানে এসেছি। যে ব্যক্তি বা যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগটা এসেছে, তাদের আয়কর নথি যাচাই করা হয়েছে। যাচাই শেষে আমরা দেখেছি, কি পরিমাণ তথ্য সেখানে দেখানো হয়েছে। কি পরিমাণ তথ্য দেখানো হয় নি। সেই তথ্য টুকুই আমরা এখানে ভ্যারিফাই করেছি। যে টুকু ডকুমেন্ট বা তথ্য হস্তগত হয়েছে, সে টুকুর ভিত্তিতে বলা যায় বিশাল পরিমাণ কর ফাঁকির তথ্য আছে। তারপরও সুনির্দিষ্ট হওয়ার জন্য আমাদের আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিছু বিভাগের কাছ থেকে আমাদের কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে আমরা বলতে পারব আসলে ফিগারটা কত। যতক্ষণ পর্যন্ত সব বিভাগ থেকে ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট আমাদের হাতে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত একজাক্ট ফিগার বলাটা মুশকিল। তবে অঙ্কটা বেশ বড়ই। এটা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। এক্ষেত্রে আমরা অল্প কিছুক্ষণের জন্য এখানে বসেছি, আমাদের আরও বেশ কিছু ইনভেস্টিগেশন বাকি আছে। আমরা পুরোটা সম্পন্ন করি। তাহলে বোধ হয় আরোও ভাল করে বলতে পারব।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যত ধরনের ডিসক্লোজ, আনডিসক্লোজ সবগুলোই আমাদের যাচাই করতে হবে। এখন সব দেওয়া যাচ্ছে না। পরবর্তীতে দেওয়া হবে। আয়কর আইনের যে বিধান আছে, কর ফাঁকির তথ্য যদি আমরা পেয়ে থাকি, আমরা একটা রিপোর্ট করব। রিপোর্ট আমরা সংশ্লিষ্ট কর অফিসকে জানাবো। কর অফিস সেটার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এই বিধান তো আমাদের আইনে আছে। এ তথ্যকে আমরা যখন স্টাবিলিস্ট করে ফেলতে পারব। তারপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুয়ায়ী আমরা প্রয়োজন বোধ করলে মামলার দিকে যেতে পারব। তবে এখন আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি টা স্টাবিলিশ করা। সেটার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ এলিমেন্ট আমাদের হাতে আছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বেনজীর আহমেদ ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক এবং ২০২০ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক থাকাকালীন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীটোল গ্রামে ৬২১ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন সাভানা ইকো রিসোর্ট ও ন্যাচারাল পার্ক। রিসোর্ট এবং অন্যান্য স্থাপনা মিলে ওই এলাকায় ১ হাজার ৪০০ বিঘা জমি বেনজীরের দখলে। অভিযোগ রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে এই পার্কটি করেন বেনজীর আহমেদ। গত বছরের জুনে এই পার্কটি আদালতের নির্দেশে ক্রোক করে স্থানীয় প্রশাসন। এখন পার্কটি রিসিভার নিয়োগের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৫
আরএ