ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রাজেডির এক বছর

মালোপাড়া সহিংসতা মামলার চার্জশিট দাখিল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৫
মালোপাড়া সহিংসতা মামলার চার্জশিট দাখিল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যশোর: যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাপাতলা-মালোপাড়া ট্রাজেডির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি পুলিশ।   
  
ট্রাজেডির এক বছর পূর্ণ হওয়ার একদিন আগে রোববার (০৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় যশোর সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম চার্জশিটটি জমা দেন।

 
  
চার্জশিটে প্রায় অর্ধশত আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে দু’এক জনকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে চার্জশিটে। এছাড়াও ১০/১২ জনকে নতুন করে অভিযুক্ত করা হয়েছে।   
  
যশোর কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রোববার (০৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম কোর্ট মালখানায় এ চার্জশিট দাখিল করেছেন। তবে, রাতে কোর্ট বন্ধ থাকায় আসামিদের নাম-ঠিকানা জানাতে পারেননি তিনি।  
  
২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়াকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের কয়েকশ' ক্যাডার দলবদ্ধ হয়ে আক্রমণ করে। ওইদিন রাতে তারা মালোপাড়ায় শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং অন্তত ১০/১৫টি বসত ঘরে আগুন দেয়।   
  
এতে প্রাণভয়ে মালোপাড়ার বাসিন্দারা ভৈরব নদ পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেয়াপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা মালোপাড়ার বাসিন্দাদের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০০/২৫০ জনকে আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা করে।  
  
মামলাটি অভয়নগর থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হাত ঘুরে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি পুলিশ। যশোর সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত শেষে রোববার চার্জশিট দাখিল করেন।   
  
এদিকে, মালোপাড়ার বাসিন্দারা প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে বর্তমানে বাড়িতে থাকলেও তাদের মধ্যে রয়েছে নান উৎকণ্ঠা। রোববার ঘটনার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। একটি বছর পার হলেও তাদের নিরাপত্তার জন্য এখনো স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশ আসামি জামিনে মুক্ত রয়েছে। ভুক্তভোগীদের আশঙ্কা সময়ের পরিবর্তনে এলাকায় প্রশাসনের যে নজরদারি রয়েছে তা আর থাকবে না। তখন হয়তো তারা আবার এ রকম ঘটনার শিকার হবেন।  
  
সরেজমিন মালোপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে সেখানকার অবকাঠামো অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। লণ্ডভণ্ড বসতবাড়ি ভেঙে ৬২টি নতুন বাসস্থান তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়েছে । বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন টানিয়ে গ্রামটিকে আলোকিত করা হয়েছে, ইটের খোয়া দিয়ে রাস্তা পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছেন নগদ অর্থসহ নানা সাহায্য। তবে, নিরাপত্তার অভাব রয়েছে প্রকট।  
  
অভয়নগর মালোপাড়ার বাসিন্দা শেখর বর্মন বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিরা বিভিন্ন সময় মালোপাড়ার কয়েকজনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো আটক হয়নি। বর্তমানে আমাদের এখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকায় তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে যদি এখানকার পুলিশ ক্যাম্পটি উঠিয়ে নেওয়া হয় তাহলে হয়তো আবার আমরা নির্যাতনের শিকার হবো। তখন হয়তো আমাদের এ দেশ ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।   
  
জমির অভাবে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণে অনিশ্চয়তা: বর্তমানে যে নিরাপত্তার আস্থার সংকটে মালোপাড়ার বাসিন্দারা রয়েছেন, তার একমাত্র সমাধান সেখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন-এমনটাই মনে করেন মালোপাড়ার বাসিন্দারা।   
  
ঘটনার পর পরই দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও সেখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়। পরবর্তীতে ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালোপাড়া পরিদর্শনে এসে সেখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ঘটনার এক বছর পার হলেও সেখানে এখনো স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।   
  
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান বাংলানিউকে জানান, জমির অভাবে সেখানে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ করতে হলে ৩৩ শতক জমি দরকার। সেটার ব্যবস্থা হলেই স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ করা হবে। অতিদ্রুত সেখানে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।   
  
বাস্তবতা হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের পক্ষে কোনোভাবেই ৩৩ শতক জমি দেওয়া সম্ভব নয়। এমনটাই জানালেন মালোপাড়ার বাসিন্দা শেখর বর্মন। তিনি জানান, মালোপাড়ার বাসিন্দারা অত্যন্ত দরিদ্র। তাদের কারোর ২/৩ শতকের বেশি জমি নেই।  
 
বিদ্যালয় স্থাপন নিয়ে অনিশ্চয়তা: মালোপাড়ায় ১৫১টি পরিবারের বাস। বাসিন্দার সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। কিন্তু এমন একটি অনুন্নত গ্রামে কোনো প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত নেই। তাই ঢাকা থেকে চাপাতলা অভিমুখে গণজাগরণ মঞ্চের লংমার্চকালে এর মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার মালোপাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন।  
 
কিন্তু সেক্ষেত্রেও জমির অভাব দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় ৩৩ শতক জমি ব্যবস্থা করতে না পারার কারণে এখনো সেখানে বিদ্যালয় স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। মালোপাড়ার বাসিন্দারা জানান, এক বছরের মধ্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ভূমি বিভাগের কর্মকর্তাগণ কয়েকদফায় এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন।   
  
দিনটিকে স্মরণ করবে উদীচী: মালোপাড়া ট্রাজেডি স্মরণে সোমবার (০৫ জানুয়ারি) উদীচীর অভয়নগর শাখা আলোচনা সভা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে দিনটিকে স্মরণ করবে।   
  
উদীচীর অভয়নগর শাখার সভাপতি সাংবাদিক সুনীল দাস বাংলানিউজকে জানান, মালোপাড়া ট্রাজেডির দিনটি স্মরণে মালোপাড়ায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় পুরো গ্রামে কয়েক হাজার মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে।   
  
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৫         
         

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।