ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কপোতাক্ষ খননে অনিয়মের প্রতিবাদে সোমবার সমাবেশ

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৫
কপোতাক্ষ খননে অনিয়মের প্রতিবাদে সোমবার সমাবেশ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তালা(সাতক্ষীরা): কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পে ব্যাপক লুটপাট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নদ খননের নামে চলছে লুটপাট।

নিয়মনীতি না মেনে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের ইচ্ছামতো খননের কাজ করে যাচ্ছে।

এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন সমন্বয় কমিটি, সীমানা নির্ধারণ ও দুর্নীতি মুক্ত কপোতাক্ষ নদ খনন বাস্তবায়ন কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন।

১২ জানুয়ারি সমাবেশের ডাক দিয়েছে সংগঠনগুলো।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ডাকবাংলো চত্বরে সকাল ১০টায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, কপোতাক্ষ খনন কাজে শুরু থেকে লুটপাট শুরু হয়েছে। এ কারণে সম্প্রতি যশোরে পানিসম্পদ মন্ত্রীর উপস্থিতে একটি তদারকি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেই কমিটি এখনও গঠন করা হয়নি। যেকারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের ইচ্ছামতো খনন কাজ করছে।

কপোতাক্ষ নদ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার তাহেরপুর থেকে উৎপত্তি হয়ে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, যশোরের ঝিকরগাছা, কেশবপুর ও মনিরামপুর, সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, আশাশুনি ও শ্যামনগর এবং খুলনার পাইকগাছার শিববাড়ি শিপসা নদীর ত্রি-মোহনায় মিশেছে্ নদটির দৈর্ঘ্য প্রায় দুইশ’ কিলোমিটার।

বর্তমানে সাতক্ষীরার তালা, কেশবপুর ও পাইকগাছা অংশে এ কপোতাক্ষ নদ খননের কাজ চলছে। ২০১৩-১৪ ও ১৪-১৫ অর্থবছরে ২১ দশমিক ২৫০ কিলোমিটার খনন কাজে প্রায় ৬২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে, এ বছর তালা উপজেলা অংশে মূল নকশা অনুযায়ী খনন করা হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দপ্তর থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের জুলাই মাসে চার বছর মেয়াদী কপোতাক্ষ নদ খননে ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২১ দশমিক ২৫০ কিলোমিটার খননে ৬১ কোটি ৮০ লাখ ৭৪ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ-বরাদ্দে চলতি বছরও মূল নকশা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ চলছে।

এ খনন কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ১৫টি গ্রুপে ১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ হাজার ৪৫০ মিটার, দুইজন ইউপি চেয়ারম্যানকে ৮৫৫ মিটার ও চার জন ইউপি সদস্যকে ৯৪৫ মিটার। এ বছরই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

একটি বে-সরকারি সংস্থার তথ্যমতে, প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে প্রায় ৯৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে ইতোমধ্যে। প্রকল্পের আওতায় পাখিমারা বিলে টিআরএম (জোয়ার-ভাটার নদী ব্যবস্থাপনা) চালুর জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় সম্পন্ন দেখালেও তা যথাযথ হয়নি।

এছাড়া টিআরএম ভুক্ত প্রায় ১৫৬২ একর জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত দুই অর্থ-বছরে (২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ ) মাত্র এক কোটি ৭৪ লাখ ৩ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়া হয়েছে। যা খুবই সীমিত। এতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি এলাকাবাসী সন্তুষ্ট নয়।

কপোতাক্ষ বাঁচাতে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর দাবি- পুরনো ম্যাপ অনুযায়ী নদের সীমানা নির্ধারণ, পেরিফেঁরিয়াল বাঁধের ফাটল মেরামত (চারপাশের বাঁধ), বাঁধের ওপর নির্মিত আউট-লেট-পাইপ প্রশস্ত করা (পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা), বেলিব্রিজ উঁচুকরা, সহজ শর্তে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, জনগণকে যুক্ত করে মনিটরিং টিম গঠন করাসহ ১৪ দফা বাস্তবায়নের দাবি তাদের।

নিয়ম-অনুযায়ী, প্রকল্পে জনগণের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ‘গাইড লাইনস্ অব পাটিসিপেটরি ওয়ার্টার ম্যানেজমেন্ট’ নীতিমালাটি সঠিকভাবে অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। তবে পানি উন্নয়নবোর্ড এ নিয়ম মানেনি।

পানিউন্নয়ন বোর্ড তালা উপজেলার বিএনপিপন্থী দু’জন ইউপি চেয়ারম্যান ও চার ইউপি সদস্যকে এ খনন প্রকল্পের কাজ দিয়েছে। তবে, তারা প্রকল্পগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের পালিত ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে জনগণের সম্পৃক্ততা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ঠিকাদার তার ইচ্ছামতো কাজ করেছে।

কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রণব ঘোষ বাবলু বাংলানিউজকে জানান, কপোতাক্ষ ভরাট হওয়ার কারণে লাখ লাখ মানুষ প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে। ফলে কপোতাক্ষ খনন নিয়ে কোনো দুর্নীতি-অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।

তিনি অভিযোগ করেন,পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি সহায়তাকারী কতিপয় জনপ্রতিনিধিদের প্রকল্প কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে জনগণের অংশ গ্রহণের চিত্র দেখানো হচ্ছে। যা মূল প্রকল্পের পরিপন্থী। আর এ অনিয়মের প্রতিবাদে ১২ জানুয়ারি তালায় সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন,‘কপোতাক্ষ নদ মূল নকশা অনুযায়ী খনন করা হচ্ছে না। লোক দেখানো খনন করে লুটপাট করা হচ্ছে। ’

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, আগে কি হয়েছে আমি জানি না। আমি নতুন যোগদান করেছি। তবে কপোতাক্ষ খননে কোনো প্রকার অনিয়ম হবে না। কেউ অনিয়ম করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, কপোতাক্ষ নদ প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাঁচা-মরার সঙ্গে জড়িত।

এ নদ নিয়ে কোনো রকম দুর্নীতি-অনিয়ম সহ্য করা হবে না। তিনি জনগণকে সম্পৃক্ত করে দ্রুত টিআরএম চালুসহ মূল নকশা অনুযায়ী নদী খননের দাবি জানান। না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।