ঢাকা: গত তিনমাসে দেশে ১৪২ জন গৃহকর্মী হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ তথ্য তুলে ধরেন ইন্টারন্যাশনাল ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের বাংলাদেশ সমন্বয়কারী আবুল হোসেন।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত গৃহশ্রমিক হত্যা ও নির্যাতনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে গুলশান-বনানী-উত্তরা, ধানমণ্ডিসহ ঢাকার অভিজাত এলাকায় এই নির্যাতন বেশি সংঘটিত হচ্ছে। আইন না থাকায় এই সব নির্যাতিত গৃহকর্মীরা সু্ষ্ঠু বিচার পাচ্ছে না।
এমন কী গৃহকর্মীদের মর্যাদা রক্ষায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১৮৯ কনভেনশন দেশে বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিদেশেও আমাদের শ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হলে সেখানেও বিচার পাচ্ছেন না তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুর্শিদা আখতার ও সভাপতি আঞ্জুমান আরা বেগম, ব্লাস্টের প্রকল্প পরিচালক কল্পনা রাণী বসু প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে গৃহকর্মীদের অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে গণস্বাক্ষর অভিযান কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও ইন্টারন্যাশনাল ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সহযোগিতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন।
বক্তারা জানান, গণস্বাক্ষর অভিযানের পাশাপাশি ৮ মার্চ একটি জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই পরামর্শ সভায় জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জাতীয় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ ও আইন প্রণয়নকারী সদস্য এবং ভারত ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি এবং আইডিডব্লিউএফ ও আইএলও প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এছাড়া স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ‘জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’ ও ‘গৃহকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক’-এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকা শহরের ১০ এলাকায় ‘স্বাধীনতা আমাদেরও’ শিরোনামে গৃহকর্মীরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সরকার ‘গৃহকর্মী কল্যাণ সুরক্ষা নীতিমালা’র খসড়া করলেও তা পাসের ব্যাপারে গড়িমসি করছে।
জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গার্হস্থ্য শ্রমের জাতীয় স্বীকৃতিও জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
গৃহকর্মীর অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি করেন বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে গৃহকর্মী হত্যা-নির্যাতন বন্ধে এর সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া গৃহকর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এনে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা ও নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টাসহ ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা এবং নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫