ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আমি পরীক্ষা দিতে পারবো তো?

আদনান রহমান ও জান্নাতুল ফেরদৌসী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫
আমি পরীক্ষা দিতে পারবো তো? ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘বাবা আজ কয় তারিখ? পরীক্ষার আর কয়দিন বাকি, আমি পরীক্ষা দিতে পারবো তো?’ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের বেডে শুয়ে বাবার কাছে অজানা উত্তরের এই প্রশ্নটি করছিলো এসএসসি পরীক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম অনীক।

৫ জানুয়ারি ২০ দলের চলমান অবরোধ কর্মসূচির প্রথমদিন কোচিং থেকে বাসায় ফেরার সময় অবরোধকারীদের ছোড়া ককটেল অনীকের ডান চোখ ও কপালের মাঝে আঘাত করে।



এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় সে। বাম চোখে ঝাপসা দেখতে পারলেও ডান চোখ খুলতেই পারেনা অনীক।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারির এসএসসি পরীক্ষায় অনীকের। তবে ককটেলের আঘাতে তার দুই চোখের অনেকাংশই এখন অকেজো।

অনীকের বাবা মিজানুর রহমান ওমানে একটি ক্যাফেটেরিয়াতে চাকরি করেন। ছেলের খবর শুনে ১২ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন তিনি। হাসপাতালে ছেলের পাশে বসে অসহায় এই বাবা বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘অনীকের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে বুয়েটে পড়বে, ইঞ্জিনিয়ার হবে। আবার কখনো ডাক্তার হতে চায়। ’
 
ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বছরখানেক আগে ইসলামী ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। তবে অ্যাকাউন্টে তেমন টাকা জমেনি। ছেলের বর্তমান অবস্থা দেখে ইঞ্জিনিয়ার নয়, ছেলে যেন দু’চোখে ভালোভাবে দেখতে পারে তারই প্রার্থনা করছিলেন তিনি। ছেলের প্রিয় খাবার মিষ্টি আঙুর আর আনার নিয়ে বেডের পাশে বসে থাকেন সারাদিন।

পরিবারের বড় ছেলে অনীক। মেয়ে ফাহমিদা আফরিন অরিন (১২) ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলের পরিণতি দেখে হাসপাতালের ওয়ার্ডে বসে ছিলেন নির্বাক মা জেসমিন রহমান। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনীককে চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে নেওয়া হবে। ছেলের পাশে বসে ভারতীয় ভিসা পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন তিনি।
 
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা এসএসসি পরীক্ষা, কোনটাই নয় বরং ছেলে দু’চোখ মেলে পৃথিবীটা দেখতে পাক- মায়ের একই কামনা।
 
তবে অনীকের চোখের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ উল্লেখ করেন হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ও অধ্যাপক প্রফেসার জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, অনীক ডান চোখ মেলতেও পারে না, কিছু দেখেও না। বাম চোখে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম দেখে। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চেন্নাইয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভিসা হলেই তাকে পাঠানো হবে।
 
৫ জানুয়ারি ককটেলের আঘাতের পর প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতাল এবং সেদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) নিউরোলোজি বিভাগে আনা হয় তাকে। ১০ দিন চিকিৎসার পর আনা হয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চারদিন ধরে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাকে। ফেনীর পশ্চিম ডাক্তার পাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে তার পরিবার।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।