লন্ডন: একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল নায়ক, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিনের ব্রিটেনে নিরাপদ বসবাসে শুধু বাংলাদেশি কমিউনিটি নয়, খোদ ব্রিটিশ সোসাইটিতেও এবার শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ গোপন করে একজন যুদ্ধাপরাধী ব্রিটিশ নাগরিকত্বই বা কেমন করে পায়, এনিয়ে এখন সমালোচনামূখর ব্রিটিশ রাজনীতিকরাও।
সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী ও বর্তমান শ্যাডো মিনিস্টার অফ স্টেইট ফর এমপ্লয়মেন্ট স্টিফেন টিমস এমপি বিষয়টি জানিয়ে হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে’র কাছে জানতে চেয়েছেন যে মঈনুদ্দিনকে নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কি? চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ১৯৭১ সালে শহীদুল্লাহ কায়সার ও মুনির চৌধুরীসহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মঈনুদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। তার (স্টিফেন টিমস) এলাকার ভোটারদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এমন একজন মানবতাবিরোধী অপরাধী কিভাবে ব্রিটেনে স্বাধীনভাবে বসবাস করে। চিঠিতে তিনি জানান, মৃত্যুদণ্ডের বিধান সম্পর্কে ব্রিটেনের অবস্থানের প্রতি তার এলাকার জনগণের সমর্থন থাকলেও, দণ্ডদেশপ্রাপ্ত একজন যুদ্ধাপরাধী কিভাবে ব্রিটিশ নাগরিকদের মতো সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করে তা জানতে চান তারা। স্ট্রিফেন টিমস এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে’র কাছে জানতে চেয়েছেন।
এদিকে, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠানোর দাবি জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সেই স্মারকলিপি ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে রেফার করা হয়েছে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসে, পরামর্শ দেওয়া হয়েছে করণীয় নির্ধারণের। ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদককে লেখা এক চিঠিতে জানানো হয়, মঈনুদ্দিন সম্পর্কে নির্মূল কমিটির অভিযোগটি ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসে (এফসিও) পাঠানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে কমিউনিটির কনসার্নের বিষয়টি এফসিওকে জানানো হয়েছে। চিঠিতে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, বিষয়টি ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ বিভাগের আওতাভুক্ত হওয়ায় করণীয় নির্ধারণে নির্মূল কমিটির স্মারকলিপিটি সেখানে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে মাঈনুদ্দিনের মতো একজন গণহত্যাকারী তাদের প্রতিবেশী ছিল জেনে তার এক সময়ের প্রতিবেশীরা আতঙ্কে শিউরে উঠেছিলেন।
এক্সট্রাডিশন ক্যাম্পেইন-ইউকের পক্ষ থেকে চৌধুরী মাঈনুদ্দিনের আবাসস্থল নর্থ লন্ডনের জেনসন রোডে তার পরিচয় সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করতে গেলে অধিবাসীদের মধ্যে এই আতঙ্ক দেখা যায়।
একজন প্রতিবেশী এসময় ভয়ে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ওহ মাই গড, দিস ক্রিমিনাল ওয়াজ আওয়ার নেইবার।
মঈনুদ্দিনের কিছুদিন আগের আবাসস্থল জেনসন রোডের প্রতিটি ঘরে ঘরে লিফলেট বিলির সময় অনেকেই আগ্রহ নিয়ে এই যুদ্ধাপরাধীর ইতিহাস শোনেন। প্রতিবেশীরা অবিলম্বে তাকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া তিনি কিভাবে পরিচয় গোপন করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেলেন তা তদন্তের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৫